vimarsana.com


আব্দুর রহমান
সুধা সদন থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে
১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ২০০৭ সালের এই দিনে আওয়ামী লীগের সভাপতি, বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়। শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে সেদিন মূলত বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও রাজনীতিকে অবরুদ্ধ করার অপচেষ্টা চালানো হয়। 
২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ভোরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় দুই সহস্রাধিক সদস্য সম্পূর্ণ বে-আইনিভাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বাসভবন সুধাসদন ঘেরাও করে। এমতাবস্থায় জননেত্রী শেখ হাসিনা ফজরের নামাজ আদায় করেন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে সুধাসদন থেকে নিয়ে যায় এবং যৌথবাহিনীর সদস্যরা বন্দি অবস্থায় তাঁকে ঢাকার সিএমএম কোর্টে হাজির করে। 
বেশ কয়েকটি হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ১০ মাস ২৫ দিন কারারুদ্ধ ছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা অর্থাৎ তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী। সামরিক বাহিনী সমর্থিত ইয়াজউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার কেন সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার না করে তৎকালীন  বিরোধী দলীয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করছিল- সেটি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। 
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামাত জোট সরকার সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ধর্ষণ ও লুটপাটের মাধ্যমে নরকে পরিণত করেছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে। গ্রেনেড, বুলেট, বোমায় শেষ করতে চেয়েছিল গণতন্ত্রের মানসকন্যাকে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকেই সমূলে নিশ্চিহ্ন করে দেবার চেষ্টা করা হয়। সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছিল জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করার ৫৯ দিন পর। এখানেই জেনারেল নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুরভিসন্ধিমূলক ইচ্ছেটা স্পষ্ট। এই স্বাধীনতা-বিরোধী শক্তি বিচ্ছিন্ন কেউ নয়। এদের জন্যই স্বাধীনতা যুদ্ধ এত রক্তক্ষয়ী হয়েছিল। স্বাধীনতা-পরবর্তী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এরাই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। 
২০০৬ সালে বিএনপি-জামাত তথা খালেদা জিয়ার সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে জটিলতা সৃষ্টি করলে সে সময়ে সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. ইয়াজউদ্দীন আহম্মেদের সাথে সাক্ষাত করেন। জেনারেল মইন তার স্মৃতিচারণ গ্রন্থ 'শান্তির স্বপ্নে' গ্রন্থে লিখেছেন, তারা আড়াইটার সময় বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন। ভেতরে গিয়ে শোনেন, প্রেসিডেন্ট মধ্যাহ্নভোজ করছেন। তাদের একটি কামরায় অপেক্ষা করিয়ে রাখা হয়। ঘণ্টা দেড়েক অপেক্ষা করবার পর প্রেসিডেন্টের দেখা মেলে। প্রেসিডেন্টকে তারা 'মহা-সংকটময় পরিস্থিতি' থেকে দেশকে উদ্ধার করার অনুরোধ জানান। প্রেসিডেন্ট বিষয়টি ভেবে দেখার সময় নেন। দীর্ঘ নীরবতার পর প্রেসিডেন্ট জরুরি অবস্থা জারির পক্ষে মত দেন। সেই সাথে তিনি নিজে প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে উপদেষ্টা পরিষদ ভেঙে দেবেন বলে জানান। 
বইতে ছ'টার সময় বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে আসার কথা লিখেছেন মইনুদ্দীন, অর্থাৎ দু'ঘণ্টার মতো তারা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ছিলেন। এই দু'ঘণ্টায় তারা কিভাবে কি বুঝিয়েছিলেন প্রেসিডেন্টকে, কোন প্রেক্ষাপটে গিয়ে প্রেসিডেন্ট জরুরি অবস্থা জারি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভেঙে দিতে রাজী হলেন, তার কোনো স্পষ্ট ধারণা এই লেখায় পাওয়া যায় না। 
বঙ্গভবনেই প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন দুটো নাম প্রস্তাব করেছিলেন, একজন শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস, অপরজন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমেদ। প্রফেসর ইউনুসকে প্রথম ফোনটি করেন জেনারেল মইনুদ্দীন। প্রফেসর ইউনুস অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে তিনি যেমন দেখতে চান সেরকম বাংলাদেশ গড়তে খণ্ডকালীন সময় যথেষ্ট নয়। বাংলাদেশকে আরো দীর্ঘ সময় ধরে সেবা দিতে আগ্রহী। সেই মুহূর্তে ড. ইউনুসের কথার মর্মার্থ বুঝিনি...পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি তিনি একটি রাজনৈতিক দল করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। যদিও পরিস্থিতির কারণে তাকে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়েছিল। 
ড. ফখরুদ্দীন আহমেদকে ফোন করে ঘুম থেকে জাগানো হয় গভীর রাতে। প্রধান উপদেষ্টা হবার আমন্ত্রণ পেয়ে স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার জন্য সময় চান তিনি। আধ ঘণ্টা পর ফিরতি ফোনে সম্মতি জানান। ২০০৬ সালের ২৯ অক্টোবর প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনের জন্য শপথ নেন প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ। 
রাজনৈতিক বোদ্ধাদের ধারণা এখন প্রায় বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে এই বলে যে- ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলা বাস্তবায়নের জন্য দুই নেত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এত বছর পরে এসে এ কথা হলফ করে বলা যায়, বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করতে শুধুমাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মাইনাস করাই ছিলো এই ফর্মুলার মূলে। ক্যান্টনমেন্ট থেকে পরিচালিত সরকারের চরিত্র যেমনটা হয় আরকি! কারণ তারা যুগে যুগে গণতন্ত্রকেই হত্যা করতে চেয়েছে। 
জননেত্রী শেখ হাসিনা সন্তানসম্ভবা পুত্রবধূকে দেখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই তিনি জানতে পারেন তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
২০০৭ সালে ১১ জানুয়ারির পর তাঁর দেশে ফেরার ওপর বিধিনিষেধ জারি করে সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার। রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য চলে নানামুখি চক্রান্ত। কিন্তু ব্যর্থ হয় সব ষড়যন্ত্র। সব বাধা অতিক্রম করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে ব্রতী হয়ে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। 
যৌথবাহিনী গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনাকে মিথ্যা মামলায় ১৬ জুলাই গ্রেফতার করে কারারুদ্ধ করে। গণমানুষের নেত্রী যখন কারাগারে, তখন এ দেশের আপামর জনগণ তার অনুপস্থিতি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছে। তার সাব-জেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের উদ্বেগ, গ্রেফতারের সংবাদ শুনে দেশের বিভিন্ন স্থানে মারা যান চার জন। ১/১১-এর সরকারের সময় ঢাকা শহরের ২৫ লাখ মানুষ জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে গণস্বাক্ষর দিয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের উৎকণ্ঠা আপামর জনগোষ্ঠীকে স্পর্শ করেছিল। আদালতের চৌকাঠে শেখ হাসিনা ছিলেন সাহসী ও দৃঢ়চেতা; দেশ ও মানুষের জন্য উৎকণ্ঠিত। বঙ্গবন্ধুকন্যা হিসেবে সত্য কথা উচ্চারণে সবসময়ের মতোই বড় বেশি সপ্রতিভ ছিলেন তিনি। অবশেষে আইনি মোকাবিলার মাধ্যমে ২০০৮ সালের ১১ জুন শেখ হাসিনা কারাগার থেকে মুক্তি পান। 
বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। ১/১১ এর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার হাজারো চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে দেশ এবং দেশের জনগণ থেকে তাঁকে বিচ্ছিন্ন করতে। পরবর্তীতে তিনি তাঁর সততা, দক্ষতা এবং দেশপ্রেমের কারণে ২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালে দশম এবং ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের মানুষ আর জোট সরকারের দুঃশাসনে ফিরে যেতে চায় না, শেখ হাসিনার মাঝে তারা খুঁজে পায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় ছিল, সেই স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে জননেত্রী শেখ হাসিনা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তার দূরদর্শী নেতৃত্ব, সাহসী পদক্ষেপে বাংলাদেশ আজ শুধু উন্নয়ন আর অগ্রযাত্রার মাইলফলকই নয়, বরং শেখ হাসিনার মানবিক নেতৃত্ব আজ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। তিনি আজ বিশ্বনেতাদের কাছে উন্নয়ন আর মানবিকতার প্রতীক। 
শত সংকট আর সম্ভাবনায় শেখ হাসিনাই বাংলার মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের শেষ ঠিকানা। যখনই এ দেশের গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ছে, তখনই গণতন্ত্র রক্ষায় ঢাল হিসেবে সামনে দাঁড়িয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। এ দেশের মুক্তিকামী, আপামর জনতা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে মানুষের মৌলিক অধিকার, সংবিধানের চার মূলনীতি বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ও ধর্ম নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত এবং অসাম্প্রদায়িক সুখি সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার বিকল্প শুধুই শেখ হাসিনা। 
লেখক: প্রেসিডিয়াম সদস্য,  বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন 
সম্পাদক : নঈম নিজাম,
নির্বাহী সম্পাদক : পীর হাবিবুর রহমান । বসুন্ধরা মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ময়নাল হোসেন চৌধুরী কর্তৃক প্লট নং-৩৭১/এ, ব্লক-ডি, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, বারিধারা, ঢাকা থেকে প্রকাশিত এবং ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড প্লট নং-সি/৫২, ব্লক-কে, বসুন্ধরা, খিলক্ষেত, বাড্ডা, ঢাকা-১২২৯ ও কালিবালা দ্বিতীয় বাইপাস রোড, বগুড়া থেকে মুদ্রিত।
ফোন : পিএবিএক্স-০৯৬১২১২০০০০, ৮৪৩২৩৬১-৩, ফ্যাক্স : বার্তা-৮৪৩২৩৬৪, ফ্যাক্স : বিজ্ঞাপন-৮৪৩২৩৬৫।

Related Keywords

Bangladesh ,Bengali ,Bangladesh General ,Sheikh Hasina Fajr ,June Sheikh Hasina ,Fakhruddin Ahmed ,Muhammad Jonah ,Riajuddin Ahmed ,Sheikh Hasina ,Sheikh Pm Center ,Bangladesh Al League ,R Alliance The Government ,Advisor Council ,Bnp Jamaat Alliance The Government ,Al League ,Xi National Parliament ,Court Sheikh Hasina ,Sheikh Minister ,President Sheikh Minister ,Prime Minister Outdoor Zia ,Jamaat Alliance ,Rahman Dream ,Government Prime Minister Outdoor Zia ,Independence War ,Outdoor Zia ,Government Power ,Main United Kingdom Ahmed President ,General Main Her ,Nobel Professor ,Governor Fakhruddin Ahmed ,Professor Jonah ,General Moinuddin ,Professor Jonah Disclaimer ,Professor Iajuddin Ahmed ,Ishmael View ,Can His ,This Country ,Mujib Rahman ,Prime Minister ,Rahman Image ,Sheikh Hasina Bengal ,Principles Bengali ,Country Manage ,பங்களாதேஷ் ,பெங்காலி ,ஷேக் ஹசினா ,அல் லீக் ,ஜமாஅத் கூட்டணி ,சுதந்திரம் போர் ,அரசு பவர் ,ப்ரொஃபெஸர் ஜோனா ,முடியும் அவரது ,அவரது நாடு ,முஜிப் ரஹ்மான் ,ப்ரைம் அமைச்சர் ,

© 2024 Vimarsana

vimarsana.com © 2020. All Rights Reserved.