চামড়ার বিশ্ববাজার চাঙ্গা ও সংরক্ষণের প্রধান কাঁচামাল লবণের দামও সহনীয় পর্যায়ে। চামড়া কিনতে সরকারের ব্যাংকঋণের অর্থছাড়ের সুবিধায় এবার কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারে স্বস্তি ফিরবে বলে আশা করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ ছাড়া বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় তৃণমূল পর্যায়ে কঠোর নজরদারির উদ্যোগ নিয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও গত বছরের মতো এবার আগে থেকে সতর্ক রয়েছে। কাঁচা চামড়ার সিন্ডিকেট ঠেকাতে ৩০ বছর পর এবার ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির সুযোগ দিয়েছে। সম্প্রতি পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি বর্গফুট চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গতবারের মতো এবারও তৃণমূল পর্যায়ে নজরদারি করবে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়।
চামড়া সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের পরামর্শ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির পরিচালক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে ইনস্টিটিউটের সহযোগিতা নিতে পারে সরকার। সারা দেশে আমাদের ৬০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক এ সময় কাজ করতে পারেন। তাঁরা বৈজ্ঞানিক উপায়ে চামড়া সংরক্ষণে সহযোগিতা করবেন। এতে প্রতি চামড়ায় মাত্র ১০০ টাকার লবণ ব্যবহার করে ন্যূনতম ১০০ দিন সংরক্ষণ করা যাবে। ফলে চামড়া পচে যাওয়ার আশঙ্কা কমে আসবে।
চামড়ার মূল্য নির্ধারণে আজ বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবারের কোরবানির পশুর চামড়ার ক্রয়মূল্য ঘোষণা করবেন। এ ব্যাপারে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ কালের কণ্ঠকে বলেন, গতবারের মতো এবারও চামড়া সংরক্ষণ ও তদারকিতে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে স্থানীয় পর্যায়ে নজরদারি করবে। এবার অন্যবারের মতো তেমন সমস্যা হবে না বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ‘এবার কত মূল্য নির্ধারণ করা হবে, তা মিটিং শেষেই বলা যাবে। কারণ ট্যানারি মালিকসহ এই খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং পারিপার্শ্বিক বিষয় বিবেচনা করেই মূল্য নির্ধারণ করা হবে।’
চামড়ার মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, ‘চামড়ার মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে এরই মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আমরা বলেছি গত বছর চামড়ার যে ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, এবারও যেন একই দাম রাখা হয়। আমরা আশা করছি মূল্য গতবারের মতোই হবে।’
গত বছর ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা আর ঢাকার বাইরে ছিল প্রতি বর্গফুট ২৮ থেকে ৩২ টাকা। এ ছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা করা হয়। আর বকরির চামড়া ১০ থেকে ১২ টাকা।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হাজি টিপু সুলতান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিবছর কোরবানিতে প্রায় এক কোটি পশু কোরবানি হয়। এবার এটা ২০ শতাংশ কমে ৮০ লাখ হতে পারে। অর্থের সংকট না হলে এবার চামড়ার বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে বলে আমাদের আশা। বাংলাদেশ ব্যাংক এবার কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদেরও ঋণ দেবে। যদি তাঁদের বিদ্যমান অপরিশোধিত ঋণ থাকে তবু তাঁরা ঋণ পাবেন।’
তিনি আরো বলেন, যথাযথ সংরক্ষণ ও নজরদারির অভাবে কয়েক বছর ধরে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়। এই রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় সরকার সচেতনতায় জোর দিলে এটা ৫ থেকে ১০ শতাংশে নেমে আসবে বলে তাঁর আশা।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হাজি টিপু সুলতান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিবছর প্রায় এক কোটি পশু কোরবানি হয়। এটা সারা বছর চামড়া সংগ্রহের অর্ধেকেরও বেশি। কিন্তু যথাযথ সংরক্ষণ ও নজরদারির অভাবে কয়েক বছর ধরে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়। এই রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় সরকারকে প্রচারণায় জোর দিতে হবে, যেন চামড়া সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট না হয়।’
এদিকে করোনায় বিশ্ববাজারে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাণিজ্য কমলেও সদ্যোবিদায়ি অর্থবছরে এই খাতে দেশের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত অর্থবছরে (২০২০-২১) চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮ শতাংশ। এ সময় আয় হয়েছে ৯৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে দেশের চামড়াশিল্প লুটের পরিকল্পিত অংশ। ফলে সরকার টাকা দিলেও তাঁদের চামড়া কেনা ও সংগ্রহে বাধ্য করতে পারে না। তারা কৌশলে চামড়া নষ্ট করে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফড়িয়াদের ওপর দায় চাপিয়ে দেয়।’
এই রকম আরো খবর