বরগুনার বেতাগী উপজেলার সরিষামুড়ি ইউনিয়নের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ওই একই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. আনোয়ার ইসলাম টিটু হাওলাদার (৩৮) কে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা ঘটনার ৩ দিনেও থানায় কোন মামলা হয়নি এবং পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। নিহতের স্ত্রী শিল্পী বেগম শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকার কারণে মামলার বিলম্ব হচ্ছে বলে পরিবারসূত্রে জানা গেছে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক সহিংসতার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে । গত সোমবার (১৯ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩ টায় থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করেন।
নিহত সরিষামুড়ি ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ারুল ইসলাম টিটু হাওলাদার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ভোড়া গ্রামের মৃত আব্দুল কাদের হাওলাদারের ছেলে।
নিহত টিটুর মেয়ে ডলি আক্তার জানায়, গত সোমবার দুপুর ১২টার দিকে তাঁর বাবা টিটুকে বর্তমান চেয়ারম্যান মো. ইমাম হাসান শিপন জোমাদ্দারের লোকজন ধরে নিয়ে যায়। এলাকার লোকজনের কাছে এ খবর জানতে পেরে তিনি বেতাগী থানা পুলিশকে জানান এবং থানা পুলিশ অনেক খোঁজাখুঁজি করে বিকেল সাড়ে ৩ টায় ছোট গৌরিচন্না নামক স্থানের রাস্তার পাশ থেকে তাঁর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। তিনি আরো জানান, বাবার মৃত্যুতে মা শিল্পী বেগম শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ রয়েছে। এজন্য মামলা করতে বিলম্ব হচ্ছে।'
এ ঘটনায় ৩ দিন অতিবাহিত হলেও থানায় কোন মামলা হয়নি এবং পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তারও করতে পারেনি। এ বিষয় বেতাগী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন,‘থানা পুলিশের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে একাধিকবার মামলা করতে বলা হলেও তাঁরা কেউ মামলা করতে আসেনি। তবে ঘটনা সঠিক রহস্যে এবং খুনের সঙ্গে সম্পৃক্তদের খুঁজে বের করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে হত্যার নেপথ্যে জানা গেছে, উপজেলার সরিষামুড়ি ইউনিয়নের বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ইমাম হাসান শিপন জোমাদ্দার ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইউসুফ শরীফ উভয়ই সরকার দলীয় লোক। গত ২০১৬ সালের স্থানীয় সরকারের ইউপি নির্বাচনে ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয় জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান শিপন জোমাদ্দারকে। দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শিপন এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইউসুফ শরীফ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিলেও পরাজিত হয়। এরপর থেকে শিপন জোমাদ্দার ও ইউসুফ শরীফের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দল তীব্র হতে থাকে।
শিপন জোমাদ্দার গত বছরের ২০ নভেম্বর এক বিবাহ অনুষ্ঠানে দাওয়াত খেয়ে বাড়ি ফেরার পথে ইউসুফ শরীফের সর্মথিতরা তাকে কুপিয়ে জখম করে। বেতাগী থানায় মামলা হয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন শিপন। এরপর ইউনিয়নের সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের নেতাকমীরা শিপন ও ইউসুফ দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
সদ্য শেষ হওয়া ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয় শিপন জোমাদ্দারকে। ইউসুফ শরীফ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও নির্বাচনের পূর্বে তাঁকে অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। নির্বাচনে শিপন জোমাদ্দার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনে নিহত টিটু হাওলাদার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউসুফ শরীফের পক্ষে কাজ করেন। আর এতেই চরম শত্রু হয়ে দাড়ায় বলে পরিবারের সদস্যরা জানান।
এই রকম আরো খবর