লাফিয়ে বা&#x

লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ


লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ
করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: ইত্তেফাক
আবুল খায়ের০৩:৪০, ০১ জুলাই, ২০২১ | পাঠের সময় : ৫.২ মিনিট
দেশে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৮ হাজার ৮২২ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। এপ্রিলের রেকর্ড ভেঙে ৮ হাজার ৩৬৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত সোমবার। সেই রেকর্ড দুই দিনও বজায় থাকল না। একই সময়ে দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১৫ জনের মৃত্যুও হয়েছে। এ নিয়ে টানা চতুর্থ দিন একশর বেশি মৃত্যু হলো।
এদিকে দেশের উপজেলা হাসপাতালগুলোতে চিকিত্সা সেবার করুণ অবস্থা বিরাজ করছে। অধিকাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবলের সংকট প্রকট। কোন কোন হাসপাতালে ডাক্তারের সংকট, কোথাও আবার অক্সিজেনের সংকট। কোথাও আবার পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা নেই, এক্সরে মেশিন নষ্ট। কোন কোন উপজেলায় প্যাথলজি পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে, কিন্তু টেকনিশিয়ান নেই, আবার কোথাও টেকনিশিয়ান আছে, প্যাথলজি পরীক্ষার যন্ত্রপাতি বিকল। উপজেলা পর্যায়ে ডাক্তারদের বাসস্থানেরও সংকট রয়েছে।
উপজেলা হাসপাতালে জুনিয়ার কনসালটেন্ট পদ আছে, কিন্তু ডাক্তার নেই। মেডিক্যাল অফিসার দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলা হাসপাতালগুলোতে অপারেশন থিয়েটার আছে, কিন্তু বেশিরভাগ অপারেশন হয় না। অজ্ঞানকারী চিকিত্সকসহ জনবল ও যন্ত্রপাতি সংকট রয়েছে। এসব কারণে অপারেশন করা সম্ভব নয় বলে অধিকাংশ উপজেলা হাসপাতালের চিকিত্সকরা জানিয়েছেন। উপজেলা হাসপাতাগুলোতে এমনিতেই সমস্যার কোন শেষ নেই। তার উপর নতুন করে বাড়তি যোগ হয়েছে করোনা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নামজুল ইসলাম বলেন, উপজেলা হাসপাতালে চিকিত্সা সেবার সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণে কার্যক্রম অব্যাহত আছে। সারাদেশে ৪৯২টি উপজেলা হাসপাতাল ২৪ হাজার ২০৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয়েছে। কনসেনট্রেটর দেওয়া হয়েছে ১৬৪২টি। একই সঙ্গে ১৬৩০টি হাই ফ্লো নেজাল ক্যানোলা সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় তা কম। বাতাসের মাধ্যমে অক্সিজেন তৈরির জন্য ৪৫টি জেনারেটর ক্রয় করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে মিনিটে ৫০০ লিটার অক্সিজেন তৈরি করা যাবে। যেখানে জনবলসহ বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, গ্রামের মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। বিলম্বে রোগীরা হাসপাতালে আসে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কেবল ঢাকা বিভাগেই ৪৩৬২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের প্রায় অর্ধেক। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট ৯ লাখ ১৩ হাজার ২৫৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত এক দিনে সারা দেশে যে ১১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ৩০ জনই ছিলেন খুলনা বিভাগের বাসিন্দা। চট্টগ্রাম আর রাজশাহী বিভাগে মারা গেছেন ২৩ জন করে। সব মিলিয়ে দেশে করোনা ভাইরাসে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়ে ১৪ হাজার ৫০৩ জন হয়েছে।
এছাড়া গত একদিনে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হারেও নতুন রেকর্ড হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যেসব নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, তার প্রতি চারটির একটিতে এই সংক্রমণ পাওয়া গেছে। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা আগেরদিন ২৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ ছিল। প্রায় একবছর আগে, গত বছরের ১৫ জুলাই ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। এরপর এই প্রথম সংক্রমণের হার ২৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। সরকারি হিসাবে গত এক দিনে আরও ৪ হাজার ৫৫০ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ১৬ হাজার ২৫০ জন।
এদিকে গ্রামের মানুষের জ্বর, সর্দি-কাশি, গলায় ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট হলে তারা মনে করেন অতীতের মতো এমনিতেই এসব রোগ ভাল হয়ে যাবে। এ কারণে রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে যান, ততক্ষণে রোগীদের অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। উপজেলা হাসপাতালে অক্সিজেন না পেয়ে অনেক রোগী জেলা কিংবা বিভাগীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে রাস্তায় মারা যান। আমাদের উপজেলা প্রতিনিধিরা সরেজমিনে গিয়ে করোনা রোগীদের চিকিত্সা সেবার করুণ অবস্থা দেখেছেন।
দামুডহুদা (চুয়াডাঙ্গা) সংবাদদাতা জানান, দামুডহুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা রোগী বহন বা দ্রুত পৌঁছানোর জন্য আলাদা কোনো বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্সই ভরসা। দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার আবু হেনা মো জামাল শুভ জানান, এখানে ৩৩টি ছোট বড় অক্সিজেন সিলিন্ডার ও আরএমও সহ ১২ জন ডাক্তার নিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম চলে আসছিল। কিন্তু মহামারি করোনার কারণেও মানুষের জীবন বাঁচাতে আলাদা কোন বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আগের নিয়মেই গতানুগতিক ভাবে সব চলছে।
ফকিরহাট (বাগেরহাট) সংবাদদাতা জানান, করোনা সংক্রমিত রোগিরা হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিত্সা সেবা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। ফলে অধিকাংশ রোগী বাড়িতে থেকেই চিকিত্সা নিচ্ছেন। ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অসীম কুমার সমদ্দার জানান, উপজেলা হাসপাতালে পৃথক একটি করোনা ইউনিটে ১৬জন রোগীকে অক্সিজেন প্রদানসহ প্রাথমিক চিকিত্সা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। পর্যাপ্ত চিকিত্সা সরঞ্জাম না থাকায় গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জেলা ও বিভাগীয় হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।
বাউফল (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা বলেন, বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট রয়েছে। ডাক্তারের ১১টি পদ আছে। কিন্তু আছেন মাত্র ৮ জন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর জনবলেরও সংকট রয়েছে।
মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) সংবাদদাতা বলেন, মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনার প্রাদুর্ভাব ব্যাপক হলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশন বেড রয়েছে ৫ টি, যা প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য । অক্সিজেন সিলিন্ডারও হাতে গোনা ১০/১২ টি। প্যাথলজীর ২টি পদ ৪/৫ বছর যাবৎ শূন্য। এজন্য ইউপিআই টেকনিশিয়ান দিপক কুমার ও সিএইচসিপি ফারুক হোসেনকে করোনা ইউনিট সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ডুমুরিয়া (খুলনা) সংবাদদাতা বলেন, সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ থেকে ১২টি সিলিন্ডারে ১ হাজার লিটারের অক্সিজেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরবরাহ করা হয়েছে। যা দ্রুত শেষ হতে চলেছে। অক্সিজেন সংকট নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুফিয়ান রুস্তব বলেন, প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
বাগমারা (রাজশাহী) সংবাদদাতা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অব্যবস্থাপনা, নোংরা পরিবেশ ও ডাক্তারদের অবহেলার কারণেও সেখানে করোনার উপসর্গ নিয়ে রোগীরা যেতে ও চিকিত্সা নিতে আগ্রহী হচ্ছে না বলে অনেকের অভিযোগ। এই হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড থেকে তিনজন করোনা আক্রান্ত রোগি পালিয়ে যাওয়ায় তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।
বটিয়াঘাটা (খুলনা) সংবাদদাতা জানান, বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশন ওয়ার্ড অপ্রস্তুত। অক্সিজেন ব্যবস্থা নেই। অক্সিজেন সিলিন্ডার ৬টি স্থাপনের ব্যবস্থা থাকলেও সংযোগ দেওয়া নেই। রোগীরা সেবা পাচ্ছেন না। বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মিজানুর রহমান বলেন, ৫০ শয্যার হাসপাতাল ঘোষণা করা হলেও এখানে জনবল এবং ওয়ার্ড সংকট রয়েছে। মোট চিকিত্সক ১০ জনের স্থানে রয়েছেন ৭ জন। নার্স ৩৬ জনের জায়গায় আছেন মাত্র ১৪ জন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি ও শিবগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে নানা সংকট থাকায় করোনা রোগীরা সুচিকিত্সা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, করোনা রোগীদের জন্য বেড বাড়ানো হয়েছে। ফলে তাদের রাজশাহী যাবার প্রবণতা কমেছে। হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য আরটি-পিসিআর ল্যাব, আইসিইউ, চিকিত্সক, ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীসহ চিকিত্সা সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে বলা হয়েছে, দ্রুত সময়ে সমাধানের আশা করছি।
ইত্তেফাক/এসআই

Related Keywords

Khulna , Bangladesh , Nawabganj , Rajshahi , Patuakhali , Morrelganj , Batiaghata , Bangladesh General , Damurhuda , Fakirhat , Bauphal , Barisal , Bagerhat , Faruk Hussein , Deepak Kumar , Kumar Samaddar , Abu Henanm Jamal , Health Directorate , Health Complex Word , Morrelganj Upazila Health , Bmw , District Or Department Hospital , Health Do , Fakirhat Upazila Health , Bauphal Upazila Health , John New , Law Not , Junior Consultant , Operation Theatre , Health Doe , Chittagongr Rajshahi , Special Law , Senior Medical , Abu Henanm Jamal Happy , Bauphal Upazila Health Complex , Morrelganj Upazila Health Complex , Health Complex , Hospital Word , Brawl Start , Complex Word , Rahman Baby , Nawabganj District Headquarters Hospital , For Lab , கூழ்ந , பங்களாதேஷ் , நவாப்கஞ்ச் , ராஜ்ஷாஹி , பாரிசல் , தீபக் குமார் , ஆரோக்கியம் இயக்குநரகம் , பிஎம்டபிள்யூ , ஆரோக்கியம் செய் , ஜான் புதியது , ஜூனியர் ஆலோசகர் , செயல்பாடு திரையரங்கம் , சிறப்பு சட்டம் , மூத்தவர் மருத்துவ , ஆரோக்கியம் சிக்கலான ,

© 2025 Vimarsana