প্রতেকই লেখার পিছনে একটা গল্প থাকে, এই লেখার পিছনের গল্পটি খুবই দুঃখজনক। ঘুম থেকে উঠে ফেসবুকে ঢুকে রাফায়েত আলভীর এই পোস্টটি চোখে পরল। চিত্র- দুঃখী বালকের গল্প ২৬ বছরের মানে জীবনের অর্ধেকটা পার করে দেয়া, এতটা বছর একজন বন্ধু না পেয়ে ছেলেটি হতাশ হয়ে শেষ পর্যন্ত পত্রিকায় চিঠি লিখেছে। একবার চিন্তা করে দেখুন ২৬ টি বসন্ত পার হয়ে যাবার পরেও একজন বন্ধু জোটেনি হতভাগার। এছাড়াও মেগা সিটি বাসের পিছনে, লঞ্চের ও সরকারী অফিসের টয়লেটে, ইউক্যালিপটাস গাছের বুকে একজন ভালো মনের মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করার করার আবেদন নিয়ে চিরকুট লেখাগুলো আমার খুব মন খারাপ করে দেয়। ব্যঙ্গ করার বদলে আমার মনে উঠে আসে তাদের একাকীত্ব এর চিত্র। কারন আমিও একসময় একজন ভালো মনে বন্ধু খুঁজতাম, তখনকার দিনে তো আর ফেসবুক ছিল না, তাই পত্র মিতালীর ভরসাই ছিল শেষ ভরসা। সাথে ক্যাডেট কলেজে চিঠিই ছিল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। কোন এক কাঠ-ফাটা দুপুরে কারেন্ট এফেয়ার্স বইয়ের পেছনে খুঁজে পেলাম গত মাসের কুইজ বিজয়ী কয়েকজন মেয়ের ঠিকানা। এর মধ্যে একজন জুঁই, একজন আশা, জুঁই নোয়াখালী আর আশা গাজীপুরের। দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ, আমি আর আমার রুমমেট জামান কাগজ কলম নিয়ে চিঠি লিখতে বসে গেলাম। আমি আশা, জামান জুঁই, কারন জ আর জ মিলে যাচ্ছে। জামানের সুন্দর হাতের লেখা সে ফট করে লিখে ফেলল চিঠি। আমি এইদিকে একবার খসড়া করে বানান ও ব্যকরণ ঠিক করলাম। এরপর ফাইনাল পিস লিখে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মেস ওয়েটার এর মাধ্যমে দিলাম পাঠিয়ে। এরপর অপেক্ষার পালা, মাস চলে গেল অথচ উত্তর আসে না, তাহলে কি এত সুন্দর লেখা বন্ধুত্বের আহবানের কোন দাম নেই? কোন দাম নেই দুজন একাকী যুবকের আবেগের? এরপর একদিন গণিতের হাই স্যার জামানকে ডেকে পাঠালেন অফিসে, এইরকম যেন আর না হয় বলে তিনি জামানের হাতে একটি চিঠি ধরিয়ে দেন। স্যার ভালো মানুষ ছিলেন, তাই চিঠি পড়ে, সব বুঝেও দিয়ে দিয়েছিলেন। জামান হারামজাদা জুঁইয়ের ফিরতি চিঠি আমাকে পড়তে দিল না, বাথরুমের ছিটকানী লাগিয়ে একা একা পড়ল। এরও কয়েকদিন পরে গণিতের অপর শিক্ষক ফজলুল করিম স্যার আমাকে ডেকে পাঠালেন। ঠিক যা ভেবেছিলাম তাই, আশার চিঠি এসেছে, ফজলুল করিম স্যার আমাকে বললেন -এইগুলো কি হচ্ছে হামীম? এসব কোথা থেকে আসে? আমি বললাম স্যার আর হবে না এমন। মাফ করে দেন। স্যার আমাকে ছাতি দিয়ে পুটুতে সপাসপ এক হালি বাড়ি লাগিয়ে দিলেন। আমি নিতম্ব ডলতে ডলতে বললাম- স্যার, আর আসবে না কোনদিন, এই চিঠিটা দয়া করে দিয়ে দেন। হাই স্যারের মতো ফজলুল করিম স্যারের দয়ার শরীর না, নিতম্বে লাল দাগ আর চিঠিবিহীন ফিরে আসলাম সে দুপুরে। তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম আশার ঠিকানা, কিন্তু না কোথাও পাওয়া গেল না। সেই আমার জীবনের প্রথম বন্ধুত্ব চেয়ে দাগা খাওয়া। ভোলা হয়নি, ভোলার চেষ্টা করেও ভোলা হয়নি। ঢাকার আনন্দ সিনেমা হলের সামনে একদিন আনারস খাচ্ছি তখন দেখলাম পাশের দোকানে একটা বই ঝুলছে- নাম ” পত্র-মিতালী” দাম বিশ টাকা। বইয়ে বিভিন্ন মেয়েকে চিঠি লেখার ঠিকানা দেয়া আছে। কিন্তু ততদিনে বনফুলের পাঠকের মৃত্যুর মতো চিঠি লেখকের মৃত্যু হয়ে গেছে। এইরকম ছোট-খাটো দুঃখের কথা হয়তো আপনারও আছে, কিন্তু লোক লজ্জার ভয়ের কারনে বলতে পারছেন না। জীবনের নানান অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তাই এই টিউটোরিয়াল লিখতে বসেছি। চিঠি, টাকায় নাম্বার, রঙ নাম্বারের ফোন ইত্যাদি যুগ পার হয়ে গেছে। আমাদের এক এলাকার বোন রঙ নাম্বারে কথা বলে ভেগে গেল- গিয়ে দেখে সেই ভদ্রলোকের আগের ঘরের স্ত্রী এবং সন্তান রয়েছে, আমরা খবর পেয়ে উদ্ধার করতে গেলাম মোটর বাইকে করে দল বেঁধে, গিয়ে দেখি এলাকার বোন দ্বিতীয় স্ত্রী রূপেই সংসার করছে, স্থানীয় একটি কলেজে ভর্তি হয়েছে। আমরা পৌঁছবার সাথে সাথে আমাদের বাজার থেকে মিষ্টি, নিমকি আর চা আনিয়ে আপ্যায়ন করল। এছাড়াও আমার এক চাচা রঙ নাম্বারে কথা বলে ডেন্টিস্ট মেয়ের সাথে প্রেম করেছেন, এবং বিয়ে করেছেন। তাদের সুখের সংসার। বে-লাইনে চলে যাচ্ছি, যাই হোক- বর্তমান সময়ে আপনাকে বন্ধুত্ব করতে হলে ফেসবুকে একটি একাউন্ট থাকতে হবে। নাওয়া খাওয়া ঘুমের মতো ফেসবুক একটি আবশ্যক অংশ আমাদের জীবনে এই বিষয়টি কষ্ট হলেও মেনে নিতে হবে। এছাড়াও ফেসবুকে রয়েছে ইমেজ বিল্ডিং ব্যপার, মনে রাখবেন আপনি যত সুন্দর ইমেজ তৈরি করতে পারবেন, আপনার তত বন্ধু বাড়বে, তত বেশী মানুষ আপনার সাথে কথা বলবে। অনলাইনে একটি ভালো ছেলের ইমেজ তৈরি করতে কিছু বিষয় মেনে চলা অত্যন্ত জরূরী। চলুন ধীরে ধীরে দেখে নেই- ১- প্রোফাইল পিকচার লম্বা মাথায়ালা ক্যামেরা দিয়ে একটি ছবি তুলিয়ে নিন, এডিট করে সেটিকে প্রোফাইল পিকচার বানাতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে ছবিতে যেন কোন অশ্লীল বিষয় না থাকে। কোন অশ্লীল মূর্তি, ভাস্কর্য, নিজের বুকের পশম, নাভি ইত্যাদি প্রোফাইল পিকচারে কোনভাবেই যেন না আসে। চিত্র- একটি ভালো ছেলের প্রোফাইল পিকচারের নমুনা। চিত্র- ভালো প্রোফাইল পিকচারের নমুনা (০২) এবারে দেখে নিন একটি দুষ্টু ছেলের প্রোফাইল পিকচারের অবস্থা, এইধরনের প্রোফাইল পিকচার দিলে ধরে রাখুন আপনার অনলাইন ভালো ইমেজ গড়ার সেইদিনই ইতি। প্রতিটি ধাপ সতর্কতার সাথে পালন করতে হবে। চিত্র- দুষ্টু ছেলের প্রোফাইল পিকচার এছাড়াও আছে গলা কাটা ছবি, রক্ত-সহ এবং কিছু ভয়াবহ ছবি, এগুলো কখনই প্রোফাইল পিচকার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। মনে রাখতে হবে অনলাইনে ভালো ইমেজের জন্য ডিসেন্ট ছবি। চিত্র- একটি ভয়াবহ প্রোফাইল পিকচারের নমুনা। এভাবেই একটি সুন্দর প্রোফাইক পিকচার সিলেক্ট করার মাধ্যমে আপনি অনলাইনে আপনার ভালো ছেলে ইমেজ গড়ে তোলার প্রথম পরীক্ষা পাশ করে যাবেন। ২-স্ট্যাটাস স্ট্যাটাস আপডেট দেয়া এবং কোনসব স্ট্যাটাসে লাইক দিচ্ছেন এর উপরে আপনার অনলাইন ভালো ছেলে ইমেজ প্রচণ্ড ভাবে নির্ভর করছে। কোন অশ্লীল সুড়সুড়ি দায়ক স্ট্যাটাসে লাইক দেয়া চলবে না, সুড়সুড়ি দায়ক স্ট্যাটাসে লাইক দিলে সেটি পাবলিক ফিডে চলে আসে এবং অন্য সবাই দেখতে পায়। সেদিন একটা স্ট্যাটাসে আমি লাইক দিলাম, স্ট্যাটাসটি ছিল এমন- আমার নুনু আমার অহংকার এরপর গভীর রাতে এক প্রবাসী আপার মেসেজ পেলাম- তিনি আমাকে আনফ্রেনড করে দিয়েছেন এবং লিখেছেন- ফেসবুকে উঠলেই জাতে ওঠা যায়না, লাইকে বংশের পরিচয়। তাই এই ধরনের কোন স্ট্যাটাসে লাইক দেয়া চলবে না, স্ট্যাটাসের প্রতিটি শব্দ, বাক্য মন দিয়ে পড়তে হবে এবং এরপর লাইক দিতে হবে। মনে রাখবেন- একটি দুষ্টু স্ট্যাটাসে লাইক আপনার ক্যারিয়ার ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। উদাহরণ- লাল ফিতে,সাদা মোজা, স্কুলের ইউনিফর্মে সজ্জিত নীলাঞ্জনারা স্কুল বাসে চড়ে দ্রুত চলে গেলেও নীলাঞ্জনাদের প্রেমে পড়া’রা পড়া ফেলে এক ছুটে রাস্তার মোড়ে এসে চলে যাওয়া বাস দেখেই বিষণ্ণ-অবসন্ন মনেই দীর্ঘ দিন কাটিয়ে দেয়। অঙ্কের খাতায় পাতায় পাতায় জায়গা করে নেওয়া নীলাঞ্জনারা হিন্দী গানের কলি,সদ্য শেখা গালাগালি এসবকিছুকেই একঘেয়ে করে প্রেমিকদের দাম দিয়ে যন্ত্রণা কেনানোর মত ক্ষমতাও অর্জন করে ফেলে শুধুমাত্র খোলা চুলে,মনের ভুলে, অবহেরে দু চোখ মেলে তাকিয়েই। নীলাঞ্জনারা বড় হয়,হয়তো তখন সে কোন এক ভুলোমনা রুবি রায়।যাকে কোন এক দ্বীপ জ্বলা সন্ধ্যায়,হৃদয়ের জানালায় কান্নার খাঁচাটা শুধু রেখে কবিতা দিয়ে কত করে ডাকত বৃথা স্বপ্নের জাল বুনতে থাকা কিশোরটি। রোদ জ্বলা দুপুরে, সুর তুলে নুপূরে বাস থেকে নামা ভুলোমনা রুবি রায় একদিন একাকী দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেকে কবিতার সুরে প্রশ্ন করে “তোমাকে কোথায় যেন দেখছি?” সবই নিয়তি, রুবি রায় রা তো আর নাটোরের বনলতা সেন হয় না, যাকে দেখে দু দন্ড শান্তি পেয়েছিল জীবনানন্দ দাস। রুবি’রা বড়জোড় সুনীলের বরুণা হতে পারে, বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে ১০৮ টি নীল পদ্ম এনে দিলেও যারা কথা রাখে না। বুকে মাংসের গন্ধ নিয়ে বরুণারা ঠিকই একদিন সুখী হয়, সুজাতার মত। হীরা-জহরতে আগাগোড়া মোড়া, সুজাতাদের স্বামীরা লাখপতি থেকে সময়ের বিবর্তনে কোটিপতি হয়ে যায় শুধুমাত্র সুজাতাদের সুখী করতে। সুজাতারা সবসময় সুখে থাকে। লাইক দেবার জন্য চমৎকার একটি স্ট্যাটাস, সামান্য দুঃখ, সামান্য অভিমান এক চিমটি সামান্য কটাক্ষ। এখানে লাইক দিলে সবাই বুঝবে আপনার মনে ভিতরের একটু যায়গায় অনেক দুঃখ আছে, একাকীত্ব আছে। মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য যা ক্যাটালিস্ট হিসাবে কাজ করে। অতিরিক্ত সুখী ছেলেদের সাথে কেউ বন্ধুত্ব করে না। সুড়সুড়ি দায়ক স্ট্যাটাসে আপনি যদি লাইক দেন তাহলে আপনার ডেপথ এবং এটিটুড নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এবং যেটি হবে অনলাইনে আপনার ভালো ছেলে ইমেজ গঠনে প্রধান অন্তরায়- উদাহরণ- সুড়সুড়ি দায়ক স্ট্যাটাস। প্রিয়তমা, জানোতো? আপাতত টেস্টে আমার চেয়ে ধারাবাহিক পারফরমার আর কেউ নেই! মনে রাখতে হবে আপনার ভালো ছেলে ইমেজ তৈরি করতে হবে, ভালো ছেলেদের কামনা বাসনা থাকে না, কাউকে কামনা করলে তারা ভালো ছেলে হতে পারে না। নিজের স্ট্যাটাসে আপনাকে লিখতে হবে সুন্দর সুন্দর কথা। আপনি পর্ন দেখতে পারেন, তবে তাই বলে সেই কথা অনলাইনে লিখবেন না, বাসার কাজের মেয়েকে একটা চড় দিতে পারেন সেই কথাও লেখা যাবে না, রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রসাব করবেন কিন্তু তাই বলে সেই কথা স্টাটাসে লিখবেন? ছি ছি……। স্ট্যাটাসে লিখবেন- শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে, দেশকে পরিছন্ন করে গড়ে তোলার অঙ্গিকার নিয়ে, আপনি লিখবেন- অনুভূতিগুলোকে আমরা মূল্য দিতে শিখিনি, জোছনা রাতে চাঁদ দেখার গল্প, পুকুরের পানিতে