লকডাউনে হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ করার কোনো নির্দেশনা দেয়নি সরকার। তবে রেস্তোরাঁয় বসে না খেয়ে অনলাইনে অর্ডার দিয়ে বা খাবার বাসায় নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু এই শর্তে হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা রাখার আগের অভিজ্ঞতা থাকায় এবার হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকরা খোলা রাখার সাহস পাচ্ছেন না। এ কারণে রাজধানীর প্রায় ৮০ শতাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ রেখেছে মালিকপক্ষ। হঠাৎ কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ শ্রমিক। আর যে ২০ শতাংশ রেস্তোরাঁ খোলা আছে, তারাও ক্রেতা পাচ্ছে না। অনলাইনে অর্ডার কম থাকার কারণে খাবার ডেলিভারি বয়ও অলস সময় পার করছেন। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত ২৩ জুলাই থেকে আগামী ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। এ সময় সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। তবে খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁয় সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার ক্রয়-বিক্রয় বা অনলাইন অর্ডারের পরিপ্রেক্ষিতে ডেলিভারি দেওয়া যাবে। এ নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, লকডাউনে সরকার আমাদের হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো বন্ধের নির্দেশ দেয়নি। কিন্তু যে শর্ত দিয়ে খোলা রাখতে বলেছে, এই শর্তে আগে খোলা রেখে আমরা অনেক ক্ষতির মধ্যে পড়েছিলাম। তাই এবার সবার পক্ষে হোটেল-রেস্তোরাঁ চালু রাখা সম্ভব হয়নি। রাজধানীর প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ রয়েছে। যাঁরা খোলা রেখেছেন, তাঁরাও অর্ডার পাচ্ছেন না বললেই চলে। কয় দিন লস দিয়ে তাঁরাও বন্ধ করে দেবেন। কারণ অনলাইন ফুড ডেলিভারি বিক্রি পুরো ব্যবসার মাত্র ৪-৫ শতাংশের বেশি নয় বলে জানান মালিক সমিতির নেতারা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর বেশির ভাগ হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ রয়েছে। অনলাইনে অর্ডারের আশায় যেসব হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা রাখা হয়েছে, সেগুলোতেও খাবার হোম ডেলিভারির তেমন চাপ দেখা যায়নি। হোটেলে বসে খাওয়া নিষেধ থাকায় বেশির ভাগ হোটেলের ভেতরে চেয়ার-টেবিল উল্টিয়ে রাখা হয়েছে। হোটেল ব্যবসায়ী ও কর্মীরা বলছেন, অফিস, দোকানপাটসহ সব ধরনের শোরুম বন্ধ থাকায় মানুষজন বাসায় অবস্থান নিচ্ছে। তাই আমরা ভেবেছিলাম হোম ডেলিভারির চাপ থাকবে। কিন্তু খুব খারাপ অবস্থা। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মানুষজন বাইরের খাবার খেতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। গত সোমবার ভাটারা থানার নর্দা ফুট ওভারব্রিজের পাশে ফুড পান্ডার ১০ থেকে ১২ জন ভেলিভারি বয়কে সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। মূলত দুপুরের এ সময় তাঁদের ডেলিভারির ব্যস্ততা বেশি থাকে। খাবার ডেলিভারির বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা মনে করেছিলাম যেহেতু কঠোর লকডাউন চলছে, মানুষজন বাসা থেকে বের হতে পারবে না। তাই এখন অর্ডার আগের চেয়ে বাড়বে। আমাদের এরিয়া ম্যানেজারও বারবার মেসেজ দিচ্ছিলেন এই লকডাউনে অর্ডার বাড়বে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, ঈদের আগে যা অর্ডার ছিল তার তিন ভাগের এক ভাগও আজ হয়নি। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেটে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে গত সোমবার দুপুরের দিকে এই প্রতিবেদক প্রায় ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করার পর মোহাব্বত আলী নামে ইভ্যালির এক ফুড ডেলিভারি বয় খাবার নিতে এলেন। তাঁর ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর অর্ডার পেয়ে মাসুদ রানা নামে ফুড পান্ডার এক ডেলিভারি বয় খাবার নিতে আসেন। তাঁরা কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা যারা খাবার ডেলিভারির কাজ করি, অন্যান্য দিন দুপুরের সময় ব্যস্ততার কারণে নিজেরাই খাওয়ার সুযোগ পাই না। স্বাভাবিক সময়ে আমরা দিনে ১৮ থেকে ২০টি অর্ডার পেয়েছি। এখন মাত্র চার-পাঁচটি অর্ডার পাচ্ছি। কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার মো. আলমাস চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডেলিভারি অনেক কম হচ্ছে। রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়ার সুযোগ না থাকায় আমাদের ৮০ শতাংশ সার্ভারকে (যারা খাবার দেয়) ছুটি দেওয়া হয়েছে।’ সুলতানস ড্যাইনের ম্যানেজার মোসাররাত হাসিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঈদের পর ২৩ তারিখ রেস্টুেরেন্ট খুলেছি। কঠোর লকডাউনের কারণে অনলাইনে অর্ডার কম হবে জেনেও খোলা রাখা হয়েছে। তবে আমরা যে ধারণা করেছিলাম তার চেয়ে অনেক কম অর্ডার পাচ্ছি। আমরা খুবই ক্ষতির মধ্যে আছি। তাই আমরা চাই অতি দ্রুত স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল-রেস্টুরেন্টে বসে খাবারের ব্যবস্থার সুযোগ সরকার যেন করে দেয়।’ বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রেস্তোরাঁয় বসে খেতে পারবে না, শুধু নিয়ে যেতে পারবে এই সিদ্ধান্তে হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা মানেই ক্ষতির মধ্যে পড়া। যেহেতু সব বন্ধ আছে, হোটেল খোলার এভাবে সিদ্ধান্ত দেওয়ার চেয়ে হোটেলগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দিলেই ভালো হতো। এই শর্তে হোটেল মালিকরা এখন সাহস পাচ্ছেন না হোটেল খোলা রাখতে। এ জন্য ৮০ শতাংশের বেশি হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখা হয়েছে। হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকদের শুধু সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য এই সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে বলে আমি মনে করি।’ রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির দেওয়া তথ্য বলছে, ঢাকা মহানগরে প্রায় আট হাজার রেস্তোরাঁ রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় আছে সাড়ে চার হাজার। আর উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় আছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার। এসব রেস্তোরাঁয় সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই লাখ শ্রমিক কাজ করেন। এই রকম আরো খবর