কবি বন্দে আলী মিয়ার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী প্রকাশিত: ১২:০৪, ২৭ জুন ২০২১ আপডেট: ১২:১০, ২৭ জুন ২০২১ কবি জসীম উদ্দীনের মতই কবিতায় গ্রামীণ দৃশ্যাবলির আরেক ভাষ্যকার বন্দে আলী মিয়া। তুলির মতো বাস্তবেও তিনি গ্রামীণ জীবনের নিদারুণ চিত্র কবিতায় তুলে ধরেছিলেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ময়নামতীর চর’। এই নামকরণ হয়েছিলো ‘ময়নামতীর চর’ কবিতাটির জন্যই। যার প্রশংসা করেছিলেন স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ‘ময়নামতীর চর’ এর কয়েকটি লাইন এ রকম- এ-পারের এই বুনো ঝাউ আর ও পারের বুড়ো বট/মাঝখানে তার আগাছায় ভরা শুকনো গাঙের তট ;/এরি উঁচু পারে নিত্য বিহানে লাঙল দিয়েছে চাষী,/কুমীরেরা সেথা পোহাইছে রোদ শুয়ে শুয়ে পাশাপাশি/কূলে কূলে চলে খরমূলা মাছ, দাঁড়িকানা পালে পালে/ছোঁ দিয়ে তার একটারে ধরি’ গাঙ চিল বসে ডালে/ঠোঁটে চেপে ধরি’ আছাড়ি আছাড়ি নিস্তেজ করি তায়/মুড়ো পেটি লেজ ছিঁড়ি একে একে গিলিয়া গিলিয়া খায়। রবীন্দ্রনাথ ‘ময়নামতীর চর’ সম্পর্কে লিখেছেন- ‘তোমার ময়নামতীর চর কাব্যখানিতে পদ্মাচরের দৃশ্য এবং তার জীবনযাত্রার প্রত্যক্ষ ছবি দেখা গেল। তোমার রচনা সহজ ও স্পষ্ট, কোথাও ফাঁকি নেই। সমস্ত মনের অনুরাগ দিয়ে তুমি দেখেছ এবং কলমের অনায়াস ভঙ্গিতে লিখেছ। তোমার সুপরিচিত প্রাদেশিক শব্দগুলো যথাস্থানে ব্যবহার করতে তুমি কুণ্ঠিত হওনি, তাতে করে কবিতাগুলো আরো সরস হয়ে উঠেছে। পদ্মাতীরের পাড়াগাঁয়ের এমন নিকটস্পর্শ বাংলা ভাষায় আর কোনো কবিতায় পেয়েছি বলে আমার মনে পড়ছে না। বাংলা সাহিত্যে তুমি আপন বিশেষ স্থানটি অধিকার করতে পেরেছ বলে আমি মনে করি।’ (২৬ জুলাই ১৯৩২)। কবি বন্দে আলী মিয়ার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭৯ সালের ২৭ জুন রাজশাহীর কাজীহাটের বাসভবনে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরে পাবনার রাধানগরের ‘কবিকুঞ্জ’তে তাকে সমাহিত করা হয়। জন্ম ১৯০৬ সালের ১৭ জানুয়ারি পাবনা শহরের রাধানগর মহল্লায়। বাবার নাম মুন্সী উমেদ আলী মিয়া এবং মা নেকজান নেসা। কবির শৈশব ও কৈশোর কেটেছে পাবনার গ্রামীণ ও নাগরিক পরিমন্ডলে। ১৯২৬ সালে তার বাবার ইচ্ছানুসারে শহরের জেলাপাড়া মহল্লার রাবেয়া খাতুনের সাথে তাঁর প্রথম বিয়ে হয়। পরবর্তী সময়ে তিনি আরো তিনটি বিয়ে করেন। ওই তিন স্ত্রীর নাম হেনা, শামসুন্নাহার ও পরীবানু। তিনি ১৯২৭ সালে কৃতিত্বের সাথে চিত্র বিদ্যায় ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করেন । প্রায় ১৬ বছর কবি কলকাতায় করপোরেশন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। কলকাতায় থাকার সুবাদে সমকালীন পত্রপত্রিকার সাথে কবি বন্দে আলী মিয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর কিছুদিন পর কবি ‘ইসলাম দর্শন’ -এর সাথে জড়িয়ে যান। করপোরেশন স্কুলে শিক্ষক থাকাকালে তিনি ‘কিশোর পরাগ’, ‘শিশু বার্ষিকী’, ‘জ্ঞানের আলো’ প্রভৃতি মাসিক পত্রিকার সম্পাদনার কাজেও জড়িত ছিলেন। তিনি কলকাতায় ছিলেন তিরিশ বছর। এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সজনিকান্ত দাশ, প্রমথ চৌধুরী, নরেশ দেব, হুমায়ুন কবির, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, একে ফজলুল হক এদের সান্নিধ্যে আসেন। কবি বন্দে আলী মিয়া ১৯৬২ সালে শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। পরে ১৯৬৫ রাজশাহী বেতারকেন্দ্রে স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে চাকরি গ্রহণ করেন এবং একই বছর সাহিত্য-প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ পাকিস্তান সরকারের প্রেসিডেন্ট পুরস্কার লাভ করেন। কবি বন্দে আলী মিয়াকে ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ সরকারের মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়। ঢাকা/টিপু আরো পড়ুন