তেল বাচাঁতেই কম গতিতে চলছিল ফেরি শাহজালাল মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৩০ জুলাই ২০২১ আপডেট: ০৭:৫৭, ৩০ জুলাই ২০২১ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসির) বেতনের বাইরে একমাত্র আয়ের উৎস শিমুলিয়া-বাংলাবাজার এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের ফেরি পারাপার খাত। অভিযোগ রয়েছে, এই দুটি নৌরুটে ফেরি পারাপারের ব্যবস্থাপনা এবং ফেরির তেল নিয়ে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য চলছে। এর মধ্যে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটের ফেরির জন্য বরাদ্দ করা তেল গোপনে বিক্রি করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিগত সময়ে তেল চুরি ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজনকে অন্যত্র শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। তেল চুরি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ফেরির জন্য বরাদ্দ করা তেল গোপনে অন্যত্র বিক্রি করা থেমে নেই। এ নৌরুটে দীর্ঘ বছর ধরে চলাচলরত লঞ্চ ও স্পিডবোটের মালিকপক্ষের কাছে তেল বিক্রি করে আসছিল বিআইডব্লিউটিসির এক শ্রেণির অসাধু সিন্ডিকেট। দীর্ঘদিনের অভিযোগ আবারও প্রকাশ্যে এলো গত ২৩ জুলাই পদ্মা সেতুর ১৭ নম্বর খুঁটির সঙ্গে রো রো ফেরি শাহজালালের ধাক্কার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে। গত রোববার বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যানের কাছে দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনার সময়ে ফেরির ইঞ্জিনের গতি ছিল মাত্র ২৫০ আরপিএমএ। গতি কম ও পদ্মায় তীব্র স্রোত থাকায় চালকরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। ফলে সেতুর খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা খায় ফেরিটি। বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া কার্যালয়ের সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তেল খরচ কমাতে সংক্ষিপ্ত পথে চলতে গিয়ে পদ্মা সেতুর ১৭ নাম্বার পিলারে আঘাত করে রো রো ফেরি শাহজালাল। অথচ স্রোতের বিপরীতে কিছুটা ওপরের দিকে চালিয়ে পদ্মা সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির মাঝ দিয়ে পদ্মা পাড়ি দিলে এ ঘটনা এড়াতে পারতো ফেরির দুই চালক (মাস্টার ও সুকানি)। সে ক্ষেত্রে পথটি দীর্ঘ হতো এবং গতিও বাড়াতে হতো। এতে তেল খরচ হতো বেশি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, ফেরির তেল বাঁচিয়ে তা চুরি করে অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়া। শিমুলিয়া কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফেরির ইঞ্জিন কম গতিতে চালালে তেল খরচ কম হয়। এভাবে ফেরির জন্য বরাদ্দ করা তেল বাঁচিয়ে তা গোপনে বিক্রির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তেল বিক্রির ওই টাকা ফেরির স্টাফসহ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসির) বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার পকেটে যায়। কয়েক বছর আগে তেল চুরির পর বিক্রির অভিযোগের তদন্তে তেল আত্মসাতের প্রমাণও মিলেছিল। বিভিন্ন পদে কর্মরত নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানিয়েছেন, ফেরির তেল চুরি বাণিজ্যের কেন্দ্রে আছেন বিআইডব্লিউটিসির ফুয়েলের দায়িত্বে থাকা ও বাণিজ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। যার ভাগ ওপর মহল পর্যন্ত পৌঁছায় বলেই দীর্ঘদিন ধরে করপোরেশনের কোটি কোটি টাকার জ্বালানি তেল চুরি এবং গোপনে বাইরে বিক্রি বন্ধ করা যাচ্ছে না। করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া নৌরুটের ফেরি পারাপার খাত ছাড়া যাত্রীসেবা ও অন্যান্য ফেরি রুটে মোটা অঙ্কের লোকসান হচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে মোট আয় হয়েছে ১০৫ কোটি এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে হয়েছে ২১০ কোটি টাকা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) এসএম আশিকুজ্জামান জানান, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ফেরির তেল চুরি ও বিক্রির বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে সত্যতা মিললে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকালে পদ্মা সেতুর ১৭ নম্বর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটের রো রো ফেরি শাহজালালের ২০ যাত্রী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ফেরির ইনচার্জ ইনল্যান্ড মাস্টার অফিসার আব্দুর রহমানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। রতন/আমিনুল আরো পড়ুন