vimarsana.com


দেশে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরুর পর পার হয়ে গেছে পাঁচ মাসের বেশি সময়। এ সময়ের মধ্যে বারে বারে পরিবর্তন হয়েছে আগের পরিকল্পনা। পরিকল্পনা অনুসারে টিকা হাতে না পাওয়াতেই এটা ঘটেছে বলে মনে করছেন টিকাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা; যে কারণে মাঝেমধ্যেই ঘটছে নানা বিশৃঙ্খলা। আর এসবের ফলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা বয়স্ক বা ষাটোর্ধ্ব বয়স শ্রেণির মানুষ টিকায় পিছিয়ে পড়েছেন। ফলে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।
এ পর্যন্ত দেশে মারা যাওয়া মানুষের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশির বয়স ৫১ বছরের ওপরে, যাঁদের মধ্যে আবার ৭০ শতাংশ ষাটোর্ধ্ব। বিশেষজ্ঞরা 
বলছেন, যত বেশি বয়স্ককে টিকা দেওয়া যাবে, ততই মৃত্যু কম থাকবে। কারণ বয়স্ক মানুষ আগে থেকেই নানা রোগের জটিলতায় ভুগতে থাকায় তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। তাঁদের যদি টিকা দেওয়া থাকে, তবে মৃতের সংখ্যা কমে আসবে; যেমনটা হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় যুক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গোলাম রাহাত খান কালের কণ্ঠকে বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার আগে থেকে কঠোর পরিকল্পনার মাধ্যমে ৮০ বছরের ওপরের বয়সী মানুষকে টিকা দিয়েছে। এরপর ৭০-৬০-৫০ করতে করতে এখন শিশুদেরও টিকা দিচ্ছে। এর সুফল হিসেবে আমরা দেখছি, টিকা দেওয়ার আগে যেভাবে মৃত্যু ছিল এখন তা নেই। দিনে ২৬-২৭ হাজার আক্রান্ত হলেও মৃত্যু ৫০ জনেরও নিচে থাকছে। এর বড় কারণ বয়স্করা আক্রান্ত হলেও তাঁদের মৃত্যুর ঝুঁকি কমে গেছে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার কারণে। এই বিশেষজ্ঞ বলেন, বাংলাদেশেও এখন জরুরি ভিত্তিতে সবার আগে বয়স্কদের খুঁজে খুঁজে টিকা দেওয়া উচিত।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, টিকা হাতে না পাওয়ায় এবং নিবন্ধন না করায় বয়স্করা পিছিয়ে পড়েছেন। এখন অবশ্য গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরকারি উদ্যোগে নিবন্ধনের পরিকল্পনা হচ্ছে। শহরে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে এ কাজ সহজ হলেও গ্রামে কিছুটা কঠিন হবে। তাই এখানে নগর স্বাস্থ্য ও সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নিতে হবে। এ ছাড়া এমন ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে বয়স্করা টিকাকেন্দ্রে গেলেই টিকা দিতে পারেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টিকা পাওয়ার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আমরা এখনো আমাদের আগের পরিকল্পনা ধরেই এগোতে চাই। যেহেতু বয়স্কদের মৃত্যু বেশি, তাই তাঁদের আগে টিকা দেওয়ার টার্গেটও আছে। এ জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিবন্ধন করা এবং তাঁদের টিকা দেওয়ার আওতায় আনার ব্যবস্থাও আগে থেকেই আছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন যেহেতু টিকা আসতে শুরু করেছে, তাই হয়তো আমরা পরিকল্পনা অনুসারে এগোতে পারব। মাসে যদি এক কোটি ডোজও টিকা আসত, তবে এই কাজে সুবিধা হয়। নয়তো কিছু পথ গিয়ে আবার আটকে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।’
দেশে টিকা আসার আগে গত বছর ডিসেম্বরেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটি পরিকল্পনা করেছিল, দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ হিসাবে পর্যায়ক্রমে মোট ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জনকে সরকারিভাবে বিনা মূল্যে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে। পাঁচটি ধাপে ৫০ ভাগে এই টিকা দেওয়া পরিকল্পনাও ছিল ওই সময়; যেখানে প্রথমে মোট জনগোষ্ঠীর ৩ শতাংশ হিসাবে ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জনকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ৪-৭ শতাংশ হিসাবে এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জনকে, তৃতীয় দফায় ১১-২০ শতাংশ হিসাবে এক কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার ৯৩৮ জনকে, পরের ধাপে ২১-৪০ শতাংশের মধ্যে তিন কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজার ৮৭৭ জন এবং  শেষ ভাগে ৪১-৮০ শতাংশের মধ্যে ছয় কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার ৭৫৪ জনকে টিকা দেওয়া কথা।
এ ক্ষেত্রে প্রথম আসা টিকা থেকে প্রথম ডোজ প্রথম পর্যায়ের ১৯ ক্যাটাগরির অগ্রাধিকারের শীর্ষে থাকা সম্মুখসারির মানুষকে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এর পরের ধাপেই রাখা হয় ষাটোর্ধ্ব বয়স্ক জনগোষ্ঠীসহ অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষকে। অগ্রাধিকারের প্রথমে থাকা ক্যাটাগরির মধ্যে আছেন সরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে সরাসরি করোনা রোগীদের সেবায় কাজ করা চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান, ধাত্রী, ফিজিওথেরাপিস্ট, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী, অ্যাম্বুল্যান্সচালক; পরে বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে সরাসরি করোনা রোগীদের সেবায় কাজ করা চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান, ধাত্রী, ফিজিওথেরাপিস্ট, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী ও অ্যাম্বুল্যান্সচালক। এরপর অন্যান্য বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীসহ, মুক্তিযোদ্ধা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মধ্যে যাঁরা সরাসরি করোনাসংশ্লিষ্ট দায়িত্ব পালন করেছেন, সম্মিলিত সেনাবাহিনীর সদস্যরা, বিচার বিভাগ, মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, সাংবাদিকদের মধ্যে যাঁরা সরাসরি করোনার খবরাখবর সংগ্রহে কাজ করেছেন, সংসদ সদস্য, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত কর্মী, ষাটোর্ধ্ব বয়সের ধর্মীয় নেতা, দাফন ও সৎকারকর্মী, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা, বন্দরের কর্মকর্তা ও কর্মীরা, বিদেশগামী শ্রমিকরা, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী, ব্যাংককর্মীরা,  যক্ষ্মা, এইচআইভি ও ক্যান্সার রোগী এবং অন্যান্য জরুরি সেবায় জড়িত ব্যক্তিরা। এ পর্যন্ত প্রথম ফেজের ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জনের টিকা দেওয়া শেষ করার কথা ছিল।
দ্বিতীয় ধাপের মোট জনগোষ্ঠীর ৭ শতাংশের আওতায় প্রথমেই এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জন সব ধরনের ষাটোর্ধ্ব জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকারে রাখা হয়েছিল। অর্থাৎ দেশে টিকা দেওয়া শুরুর দ্বিতীয় মাস থেকেই এই বয়স্ক বা সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা রাখা হয়। এর পরে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক, গণমাধ্যমের বাদ পড়া কর্মী, পার্বত্য অঞ্চল ও দুর্গম অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাসিন্দা, পরিবহন শ্রমিক, হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ফার্মেসির কর্মী, গার্মেন্টকর্মীদের রাখা হয়েছিল। ওই পরিকল্পনার পরের ধাপে মোট তিন কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজার ৮৭৭ জনকে টিকা দেওয়ার কথা। এরপর শিক্ষকদের ভেতর থেকে বাদ পড়া বাকিরা, প্রসূতি নারী, সরকারি অন্যান্য কর্মচারী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর আরো সদস্য, আমদানি-রপ্তানিসংক্রান্ত জনবল, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার অন্যান্য কর্মচারী, অন্যান্য আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মী, আমদানি-রপ্তানিতে জড়িত বাকি কর্মী, বেসরকারি কর্মী, কারাবন্দি ও কারারক্ষী,  বস্তিবাসী ও ভাসমান মানুষ,  কৃষি ও খাদ্য খাতের কর্মী, আবাসিক কর্মী, গৃহহীন, অন্যান্য কারখানার কর্মী, বাকি থাকা পরিবহন শ্রমিক, এরপর ৫০-৫৪ বছরের জনগোষ্ঠীর সাধারণ মানুষ এবং অন্যান্য জরুরি ব্যবস্থাপনায় জড়িতরা। সব শেষ ধাপে তরুণ জনগোষ্ঠী এবং শিশু ও স্কুলগামীরা টিকা পাওয়ার কথা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকা পরিকল্পনায় যুক্ত একাধিক সূত্র জানায়, প্রথমত দেশে টিকা আসার পর নিবন্ধনকারী কম হওয়ায় হঠাৎ করেই বয়সসীমা ৫৫ বছর থেকে একটানে ৪০ বছরে নামিয়ে ফেলা এবং পরে পরিকল্পনামতো টিকা আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সব কিছু ওলটপালট হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৪০ বছরে নামানোর ফলে টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়ে গেলেও তাতে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ কম।
ঠিক কতসংখ্যক ষাটোর্ধ্ব মানুষ এখন পর্যন্ত টিকা দিয়েছেন তার কোনো গোছানো হিসাব নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে। তারা শুধু চল্লিশোর্ধ্ব ও ফ্রন্টলাইনার হিসাবে টিকার পরিসংখ্যান রাখছে। তবে ওই পরিসংখ্যান ব্যবস্থাপনায় যুক্ত এক সূত্র জানায়, পর্যবেক্ষণ অনুসারে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত যাঁরা টিকা নিয়েছেন তাঁদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশের মতো রয়েছেন বিভিন্ন ক্যাটাগরির অনূর্ধ্ব ৫৫ বছর বয়সীরা। বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে অর্ধেকের মতো রয়েছেন ৫৫-৬০ বছরের এবং বাকিরা হলেন ষাটোর্ধ্ব।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানায়, সঠিকভাবে মনিটর করতে না পারায় এবং পরিকল্পনায় অটুট থাকতে না পারায় অগ্রাধিকারভিত্তিক সাজানো ছক ভেঙে শুরু থেকেই ৪০ বছরের বেশি বয়সের সুযোগ নিয়ে অগ্রাধিকারের বাইরের বহু মানুষ টিকা নিয়েছেন। একদিকে নিবন্ধনের জটিলতা, অন্যদিকে নানা অপপ্রচার এবং অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের সঙ্গে হুড়াহুড়িতে টিকতে না পেরে ষাটোর্ধ্ব মানুষ পিছিয়ে পড়েছেন।
সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, এখন পর্যন্ত মোট জনসংখ্যার মাত্র আড়াই শতাংশ মানুষ টিকা পেয়েছেন। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত টিকার জন্য উপযুক্ত মোট তিন কোটি ৯৫ লাখ মানুষের (৪০+ ও ফ্রন্টলাইনার) মধ্যে মাত্র ১৮ শতাংশ বা সাড়ে ৭২ লাখ মানুষ টিকার নিবন্ধন করেছেন। এই নিবন্ধনকারীদের মধ্যে  ৮০ শতাংশ প্রথম ডোজ ও ৭৩ শতাংশ দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন।
এই রকম আরো খবর

Related Keywords

Bangladesh ,United Kingdom ,Frahat Khan ,Mushtaq Hussain ,District Council ,District Administration ,Management Committee Plan ,City Corporation ,Bmw ,Health Do ,Union Council ,United Kingdom National Health ,Bar ,Plan Price ,Plan Being ,Health Doe ,December Health Doe ,Hill Region ,First Country ,Not Health Doe ,Ticker For ,Ticker Registration ,பங்களாதேஷ் ,ஒன்றுபட்டது கிஂக்டம் ,ரத் காந் ,முஷ்டாக் ஹுசைன் ,மாவட்டம் சபை ,நகரம் நிறுவனம் ,பிஎம்டபிள்யூ ,ஆரோக்கியம் செய் ,தொழிற்சங்கம் சபை ,ஒன்றுபட்டது கிஂக்டம் தேசிய ஆரோக்கியம் ,மதுக்கூடம் ,திட்டம் ப்ரைஸ் ,மலை பகுதி ,முதல் நாடு ,

© 2025 Vimarsana

vimarsana.com © 2020. All Rights Reserved.