vimarsana.com


সাগরের ঢেউয়ে দুলছে হোসেনের ভাগ্য
তারেকুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম
প্রকাশিত: ০৯:১৯, ৯ জুলাই ২০২১  
আপডেট: ১০:৩৩, ৯ জুলাই ২০২১
তখন বয়স মাত্র তিন বছর। ঠিকমতো চিনে ওঠার আগেই চলে গেলেন মা নূর আয়েশা। না ফেরার দেশে।
মায়ের মৃত্যুর পর ছেলেকে ফেলে চলে গেছেন বাবাও। নিরুদ্দেশের পথে সেই যে পাড়ি দিয়েছেন আজও ফেরেননি। দশ বছর বয়সেও জন্মদাতা নুরুল ইসলামকে চোখে দেখেনি হোসেন।
ছোট্ট হোসেনের ঠাঁই হয় মামা মমতাজ আহমদের অভাব-অনটনের সংসারে। চার ছেলের সাথে যুক্ত হয় ভাগ্নেও। অভাবী হলেও ভাগ্নেকে আপন করে নেন মামা-মামি। টেকনাফ উপকূলীয় বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর গ্রামে মামার বাড়িতেই বেড়ে উঠেছে হোসেন।
তবে বয়স দশ হলেও স্কুলের বারান্দায় কখনো পা পড়েনি হোসেনের। স্কুলের পাঠ্য বইয়ের চেয়ে সমুদ্রের গর্জন আর ঢেউয়ের ছন্দ তার অনেক বেশি পরিচিত। অনেক বেশি আপন। প্রতিদিন সকালে বই বুকে জড়িয়ে স্কুলে যাওয়া তার কাছে স্বপ্নের মতোই।
এই বয়সেই ছেলেটি হয়ে উঠেছে একজন দক্ষ মাছ শিকারি। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের সাথে মিতালি পাতিয়ে জীবিকার জন্য যুদ্ধ করে চলেছে। বইয়ের বদলে প্রতিদিন সকালে তাই মাছ ধরার জালটিকেই কাছে টেনে নেয় সে। মাছ বিক্রি করে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা প্রতিদিন রোজগার হয় তার।
কয়েকমাস আগে হঠাৎ করে মারা গেছেন মামাও। মামি হৃদরোগে অসুস্থ। হোসেনের উপার্জনেই এখন চলছে মামার সংসার। চলছে মামির চিকিৎসাও। মামাতো ভাইয়েরা নিজ নিজ সংসার নিয়েই ব্যস্ত। মায়ের খোঁজ রাখেন না তারা। তাই সমস্ত দায়িত্ব নিজের ছোট্ট কাঁধে তুলে নিয়েছে হোসেন।
বয়সে ছোট হলেও চিন্তা-ভাবনায় মোটেও ছোট নয় হোসেন। সংগ্রামী এই ছোট্ট ছেলেটির কষ্ট দেখে অন্য জেলেরাও তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠেছেন। নিজেদের সঙ্গী করে হোসেনকে নিয়ে মাছ ধরতে যান তারা।
হোসেনকে ভালো ছেলে হিসেবে জানেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও। অল্প বয়সেই মা-মামা হারা ছেলেটি পরিবারের সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে। বিষয়টি তাদের অবাক করেছে।
সরকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পুনর্বাসন নিয়ে কাজ করছে বহু আগে থেকেই। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে না বলেই শিশুরাও পুনর্বাসিত হচ্ছে না বলে দাবি তুলেছেন সচেতন মহল।
কক্সবাজারের মৎস্য শিল্পে শিশু শ্রম নতুন কিছু নয়। হোসেনও এ শিল্পের একজন শিশু শ্রমিক। তবে শখের বশে নয়, নিতান্ত পেটের দায়েই সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে হয় তাকে।
আত্মবিশ্বাসী হোসেন আত্মনির্ভরশীল হতে চায়। চায় মামিকে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করতে। সাগড় পাড়ের এসব হোসেনদের জন্য নিশ্চয়ই সরকারের ভাবনা রয়েছে। সেই ভাবনা বাস্তবায়িত করে হোসেনদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে সরকার বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে সেটাই কাম্য।
কক্সবাজার/সনি
আরো পড়ুন  

Related Keywords

China ,Baharchara ,Chittagong ,Bangladesh ,Teknaf ,Noor Ayesha ,Mama Mumtaz Ahmad ,Baharchara Union ,School Textbook ,For War ,Cox Fisheries ,Government Reflections ,சீனா ,சிட்டகாங் ,பங்களாதேஷ் ,பள்ளி பாடநூல் ,க்கு போர் ,

© 2025 Vimarsana

vimarsana.com © 2020. All Rights Reserved.