“জেনারেল হিষ্টরি না ইসলামিক হিষ্টরি?” সো আবার মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যাবহার করার কথা ভাবলো বউ। এবার সাবজেক্ট চেঞ্জ করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু খুব একটা ভালো সাবজেক্ট না পাওয়ায় আর ততোদিনে হিষ্টরির অনেকে বন্ধু হয়ে যাওয়ায় ও শেষ পর্যন্ত হিষ্টরিতেই থেকে যায়। আমার দাদা এবং দাদার ছোটভাই দুইজনেই স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ। টাইপ করা একটা করে সার্টিফিকেট তাদের জন্য দেয়া হয়েছিলো। তাদের সন্তানেরা বা স্ত্রীরা কেউ কোন সুযোগ পেয়েছেন কিনা জানা নেই। শুনি নাই কখনো। দাদার ছোটভাই চাকুরি করতেন ইপিআরে। আব্বা একবার খোজখবর করছিলেন আমার ফুফুর জন্য কোন ভাতা বা সেরকম কিছু যোগাড় করা যায় কিনা। ততদিনে ফুফুর বয়স ১৮ বছরের বেশি হয়ে যাওয়ায় কোন ফল হয়নি। আমার সেই দাদী মারা যান যক্ষায় ৮৪-৮৫ সালের দিকে। আমার আপন দাদী কোন আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন বলে জানা নেই। আমার দাদা নকলা থানায় কর্মরত অবস্থায় মারা যান। এমনকি তার নিজের দোনলা বন্দুকটা এখনো তুলে আনা হয় নি; লাইসেন্স কয়েক খন্ড হয়ে পড়ে আছে বাসায়। আমার ছোটমামা কর্নেল তাহেরের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। তার সার্টিফিকেট দিয়ে দেন তার ছোটবোনের দেবরকে, সেইটা দিয়ে সে চাকুরি করে এখন অবসরে। ভার্সিটিতে যখন পড়তাম তখন এক মুক্তিযোদ্ধা তার সার্টিফিকেট দেখিয়ে ভিক্ষা করতেন। খারাপ লাগতো, তিনি ভিক্ষা করতেন বলে নয় বা সার্টিফিকেট ব্যাবহার করতেন বলে নয়। স্বাধীন বাংলাদেশে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে ভিক্ষা করতে হয় বলে। আমার বাবা টাঙ্গাইলে দু জায়গায় পতাকা তুলেছিলেন। না এজন্য তার কোন সার্টিফিকেট নেই। আমার দাদীর ছোটভাই সরাসরি যুদ্ধ করেছেন, তিনিও কোন সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন বলে জানা নেই। আচ্ছা আমাদের জাতীয় সংসদে আসন কয়টা? ৩০০ সরাসরি ভোটে নির্বাচিত আর ৫০ টা সংরক্ষিত মহিলা আসন। এখন কেউ কি আমারে বুঝাইয়া দিবে ঐ ৫০ আসনের মরতবা? আচ্ছা আমাদের দেশে কি সবক্ষেত্রে আদিবাসী কোটা নাই? আরে জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যন্ত ছেলে মেয়ের সিটের অনুপাত ১:১। তাইলে? এসএসসি, এইচএসসিতে মেয়েদের আলাদা মেধাতালিকা ছিলো; সম্মিলিত তো ছিলোই। বৃটিশ আমলেও নিচা জাতের লোকেদের জন্য পার্লামেন্টে আলাদা সিট বা কোটা ছিলো। একসময় বাঙালি মুসলমানেরা এই কোটা সিস্টেমের মিঠাই খাইছে। খুব সম্ভবত আওয়ামীলীগ ৯৬ এ ক্ষমতায় আইসা বয়ষ্ক ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ইত্যাদির ব্যাবস্থা করে। যতদূর মনে পড়ে বিএনপি ৯১ এ ক্ষমতায় আইসা মেয়েদের জন্য বিনামূল্যে স্কুলের বা পড়ার ব্যাবস্থা করে, ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ছিলো কি! পরে আওয়ামীলীগের সময় কি এইটা ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত ফ্রি করা হয়! আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে ফুলপ্রুফ কোন সিস্টেম আসে নাই, সবকিছুরই অপ ব্যাবহার হইছে। এই যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এইটা নিয়াও ২ দফা প্রবলেম হইছে। তাইলে আর বাকি থাকে কি? অসম্ভব নয় যে কোন কোন রাজাকারের সন্তানেরাও মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট বানাইয়া ভালো চাকুরি করতেছে। আরেকটা ব্যাপার যদিওবা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২ নাম্বারি না হয় এর সুযোগে আওয়ামীমনা লোকেরা উপকৃত বেশি হবে বা হচ্ছে। কিভাবে? রাজাকারদের সাথে একই চাদর শেয়ার করার পর থেকে কয়জন মুক্তিযোদ্ধা বিএনপিকে সাপোর্ট করেন সেইটা একটা বিশাল প্রশ্ন। অন্তত যেই দল এখনো শেখ মুজিবকে মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা মনে করেন না বা এখনো ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়া অপরাজনীতি করেন তারা আর যাই হোক মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করতে পারে না। সো মুক্তিযুদ্ধ কোটা নিয়া বিএনপি-জামাতের একটা প্রবল চুলকানি তো আছেই। নিলোফারের সেই ৩ লাখ এখন যারা পরীক্ষা দেয় বা দিয়েছে বিসিএস তাদের জন্য বলছি… আমার এক বন্ধু আছে এখন এক বিশ্বখ্যাত সংস্থায় মোটা বেতনে চাকুরি করে, জিনিয়াস পোলা। ছাত্র জীবনে পরীক্ষা দিয়া আইসা বলতো লেটার পাবে, ৯০ পাবে, ১০০ পাবে। এবং সিরিয়াসলিই বলতো। পরে দেখতাম পাইছে ৪০, ৫০; সে এতোটাই কাছের বন্ধু ছিলো যে এইটা নিয়া খোচাইতেও খারাপ লাগতো। যারা বিসিএস পরীক্ষা দিচ্ছে বা দেয় তাদের অনেকেই মেধাবি এতে কোনই সন্দেহ নাই। কিন্তু সবাই কিন্তু প্রথম হয় না, কৃতকার্য্যও হয় না। নিজেদের অক্ষমতা ঢাকার জন্য কোটা সিস্টেম বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা কোটার পিছনে লাগাটা বেশ সন্দেহের উদ্রেক করে। বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ১৯৭১; মুক্তিযুদ্ধ। হ্যা সেই সভ্যতার শুরু থেকে। সো মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য, তাদের সন্তানদের জন্য যদি কোন কোটা থাকে তাতে যদি কারো গাত্রদাহ হয় তবে সেখানে একটু চিরে মরচ-লবণ মাখিয়ে দেয়া যেতে পারে। কি খারাপ লাগলো? যখন ব্যাঙ্গ করে বলা হয় এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি কোটা আসবে তখন মনে হয় কোন বাঙালি নয়, পাকি রক্ত এই কথা বলছে। মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্বন্ধে কতটা অবজ্ঞা ধারণ করলে এভাবে বলা যায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিদের কথা!!! যদি কোটা বাতিল করতেই হয় তবে সকল প্রকার কোটা বাতিল হোক, এক মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের আওয়াজ তোলা শুধুমাত্র হঠকারিই নয়, বরং এর পিছনে কু রয়েছে। বিদ্রঃ আমি সকল প্রকার কোটার বিরুদ্ধে। আর যারা বিশেষ গান করেন তাদের সম্পর্কে সাবধান। আরেকটা ব্যাপার বাংলাদেশ থেকে এতোদিন কোটার উপর ভর করেই পাবলিক ডিভির এপ্লাই করতো। বাংলাদেশরে মনে হয় বাদ দিয়া দিছে লিষ্টি থিকা এখন। ২,৩৪৩ বার দেখা হয়েছে প্রকাশিত লেখা বা মন্তব্য সম্পূর্ণভাবেই লেখক/মন্তব্যকারীর নিজস্ব অভিমত। এর জন্য ক্যাডেট কলেজ ব্লগ কর্তৃপক্ষকে কোনভাবেই দায়ী করা চলবেনা। ৯ টি মন্তব্য : “মুক্তিযোদ্ধা কোটা”