those who survived pandemic - Anandabazar : vimarsana.com

those who survived pandemic - Anandabazar


Anandabazar
তবু অনন্ত জাগে
এই লড়াইয়ে যাঁরা জিতছেন, হারছেন, তাঁরা শুধু কিছু সংখ্যা নন
ঈশানী দত্ত রায়
১১ জুলাই ২০২১ ০৫:০৮
কঙ্কালসার মুখ ও দেহ, চোখ খোলা, স্থির। পাশে খেলা করছে সন্তান। হাতে খাবারের প্যাকেট। পাশে আর এক সন্তান। সংবাদপত্রের পাতায় এই ছবি দেখেছেন অনেকেই। কলকাতার একটি ফুটপাতে মাসখানেক আগে। মেয়েটিকে এই অবস্থায় দেখে এক ট্র্যাফিক সার্জেন্ট তাঁকে হাসপাতালেও পাঠান, কিন্তু বাঁচানো যায়নি। সম্ভবত ফুটপাতেই তিনি মারা গিয়েছিলেন। মেয়েটি দিনমজুরের কাজ করতেন। মেয়েটির স্বামী বাচ্চা দু’টিকে নিয়ে যান। তার পর? কেউ জানে না।
চিত্রসাংবাদিকরা যদি এই দৃশ্য দেখতে না পেতেন?
এক ফুটপাতবাসিনীর মৃত্যু— হয়তো এটুকুতেই শেষ হয়ে যেত একটি জীবনের মৃত্যু। কিন্তু ওই ছবিটার জন্য মনে থাকবে মৃত্যুর মুখ, দু’টি শিশু এবং একটি পরিবারের কথা। অন্তত কিছু দিন। তা না হলে? মৃত্যু নিছক সংখ্যামাত্র। এই যে করোনাকালে আমরা গুনছি— দৈনিক কত আক্রান্ত, কত মৃত, কত সুস্থ। কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের শেষ দিকে যখন রাজ্যে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর সংখ্যা দুইয়ে নেমেছে, আর আমরা অপেক্ষা করছিলাম কখন তা শূন্য হবে, কেউই হয়তো ভাবিনি যে, ওই দু’জন কারা? শুধু ভেবেছি নামহীন, নিরাপদ একটি সংখ্যা। অথচ, প্রতিটি সংখ্যার পিছনে থাকে একটি মুখ, একটি পরিবার, একটি বৃহত্তর পরিবার এবং একটি সমাজ। হাত বাড়িয়ে, মুখ ফিরিয়েও। মনোযোগী এবং উদাসীন।
Advertisement
Advertisement
বেশ মনে পড়ে, চিনে ‘অজানা জ্বরে’ ৯ জনের মৃত্যুর খবরটি প্রতিটি সংবাদপত্রে ছোট খবর হিসেবে জায়গা পেয়েছিল। ভিস্যুয়াল মিডিয়ায় তার কোনও জায়গা হয়নি, সংখ্যার বিচারে হওয়ার কথাও নয় হয়তো। কিন্তু কেউ তখন ভাবতেই পারেননি, ওই নয় সংখ্যাটি ক্রমে ক্রমে পৃথিবী তছনছ করে দেবে। তেমনই আমাদের আশ্বস্ত করে মৃত্যুর সংখ্যা যে দিন এক জনে নেমে আসবে, সে দিনও মনে রাখতে হবে যে, ওই এক জনও একটি মুখ— এক জন মানুষ, যাঁর পিছনে পড়ে থাকল একটি ভেসে যাওয়া সংসার। কথায় বলে, যার যায় তারই যায়। কী ভাবে যায়? তরঙ্গ মিলায়ে যায়, তরঙ্গ উঠে। কী ভাবে উঠে। দুঃখ, মৃত্যুকে সঙ্গে নিয়ে অনন্ত জাগছে কী ভাবে? কতটা বদলে দিয়ে সব কিছু?
করোনা-পূর্ববর্তী সময়ের কথা ধরা যাক। অফিসপাড়ায়, ব্যস্ত রাস্তার ধারে চা-তেলেভাজার দোকানে দেখা যেত কত ক্লান্ত অফিসফেরতা বা দিনগত সামান্য রোজগার-ফেরত মুখ, হাতে বা কাঁধে ব্যাগ, তেলচিটে শার্ট, দু’টি তেলেভাজা এবং একঠোঙা মুড়ি, কাগজের কাপে চা, খেয়ে হাঁটা শুরু ট্রেন বা বাস ধরতে। আমরা কেউ জানি না, এটাই হয়তো তাঁর সারা দিনের খাওয়া, বাড়ি ফিরে গভীর রাতে হয়তো দু’মুঠো ভাত, বা নিজে ওই চা-মুড়ি, তেলেভাজা-লঙ্কায় কামড় দিয়ে হুসহাস করে বুক জ্বালায় পেট ভরিয়ে বাড়ির জন্য কিছু শুকনো ফল কিনে নেন রোজ। এখন পাঁচ টাকার সরকারি ডিম-ভাত-তরকারির প্লেট হাতে নেওয়ার লাইনে তেমন মানুষও তো আছেন। বাড়িতে একটা খাওয়ার মুখ তো কমে দুপুরে। স্ত্রী-সন্তান কি জানেন, রোজগার করতে বেরোনো বা দুপুর পেরিয়ে সস্তার বাজার করতে যাওয়া বা হয়তো আড্ডা দিতে বেরোনো মানুষটি লাইনে দাঁড়িয়ে ক্ষুন্নিবৃত্তি করছেন দিনের পর দিন? অফিসপাড়াতেই এক পানশালার কাছাকাছি কসমেটিক্স-এর দোকানে যে দামি প্রসাধনসামগ্রী বিক্রি হয়, তা সাধারণ মধ্যবিত্ত তরুণীর নাগালে নয়। কিন্তু যাঁরা তা কেনেন, তাঁদের প্রসাধনের আড়ালেও থাকে এক-একটি অপুষ্টিতে ভরা শরীর ও মুখ— এই প্রসাধন ছাড়া তাঁদের পেট চলবে না। একটি দোকান তাঁদের উপর নির্ভর করে অনেকটাই। নির্ভর করে পরিবার। তাঁরা নির্ভর করেন কাদের উপর?
আবার ধরুন শ্রাবণ রাতে অঝোর বর্ষায়, গলিতে দু’টি মোটরবাইক। দুই যুবক ভিজতে ভিজতে প্রাণপণে চেঁচিয়ে যাচ্ছেন, “আমরা দাঁড়িয়ে আছি। খুব বৃষ্টি পড়ছে। বাড়ির ঠিকানাটা বলুন, কোন রাস্তা দিয়ে যাব।” ডেলিভারি বয়! ব্যক্তিগত গর্ব ছাপিয়ে, সুহানা সফর ছাপিয়ে, রাজনীতির মোটরবাইকবাহিনী পেরিয়ে মোটরবাইক পিঠেতে বোঝা নিয়ে নতুন রানারবাহিনীতে পৌঁছে গিয়েছে গত কয়েক বছর ধরেই। করোনাকালে দৃশ্যত যাঁদের সংখ্যা বেড়েছে অলিতেগলিতে। বেড়েছে মফস্‌সলের গলিতে গলিতে ডাকাডাকি। করোনার প্রথম পর্বে অটোচালকেরা অটোয় কলমি শাক, নটে শাক, লেবু-লঙ্কা তুলে বিক্রি করতে বেরিয়েছিলেন। রাস্তার পাশে জঙ্গলে বেড়ে ওঠা কচু শাক তুলে বিক্রি করেছে বাচ্চা, যুবক-যুবতী। চার-পাঁচ জন যুবক মিলে পাতিলেবু, লঙ্কা, পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসতেন রোজ। তাঁরা কেউ আনাজবিক্রেতা ছিলেন না। সেই সব মুখের কী হল? দ্বিতীয় পর্বে কোথায় তাঁরা? টোটো আর অটোর দাপটে রিকশা চালিয়ে পেট চলে না। প্রোমোটিংয়ের ফুলে ফেঁপে ওঠা বাজারে রাজমিস্ত্রির জোগানদারের কাজ নিয়েছিলেন এক রিকশাচালক। অতিমারির দ্বিতীয় পর্বে তিনি আবার রাস্তায়। চেনা বাড়িতে এসে বাগান পরিষ্কার, বাড়ি পরিষ্কার-সহ যাবতীয় কাজ রোজ চাইছেন। কিন্তু রোজ তো এত পাতা পড়ে না গাছ থেকে।
যে কোনও সঙ্কট, অতিমারি, বা অন্য যে কোনও দুর্যোগই পথের পাঁচালি। হরিহর গ্রাম ছাড়েন। শ্রমিক গ্রাম ছাড়েন, দূর রাজ্যে। ফিরতে পারেন, না-ও পারেন। পোঁটলাপুঁটলি নিয়ে সেই মিছিল দেখলে মহাভারতের মহাপ্রস্থানের দৃশ্য মনে হয়। কিন্তু সেখানে শুধু মৃত্যু আছে, এক জনের জন্যও কোনও উত্তরণ নেই, স্বর্গ নেই। রেললাইনে কাটা পড়া আছে, রক্ত মেখে শুকনো রুটির পড়ে থাকা আছে।
এবং হ্যাঁ। ক্রমাগত বেড়ে চলা সংখ্যা আছে। এবং নেই। কত জন এমন শ্রমিক, মজুর ভিন্‌রাজ্যে কর্মরত অবস্থায় মারা গেলেন, কোথায় মারা গেলেন— কেন্দ্রের সরকার বাহাদুর হিসেব দিতে চান না। কারণ মানুষ বা মৃত্যু সংখ্যা মাত্র। কমাতে হবে। নহিলে খরচ বাড়ে। সংবাদকর্মীরা লিখি, পরিযায়ী শ্রমিক। পরিযায়ী শুনলেই তো পাখির কথা মনে হয়। তসলিমা নাসরিন লিখেছিলেন, “শীতের পাখিরা যাচ্ছে পশ্চিম থেকে পুবে, ওরা একটি করে পালক ফেলে আসবে শাপলা পুকুরে, শীতলক্ষায়, বঙ্গোপসাগরে। ব্রহ্মপুত্র শোনো, আমি ফিরব। শোনো শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, সীতাকু-পাহাড়-আমি ফিরব। যদি মানুষ হয়ে না পারি, পাখি হয়েও ফিরব একদিন।” কিন্তু এঁরা পাখি নন। মানুষ। এঁরাও ফেরেন, যান, আবার ফেরেন। অনেকগুলো পেট তাঁদের যাতায়াত করায়। কাশ্মীরে জঙ্গিদের হাতে সহকর্মীরা খুন হওয়ার পরও মুর্শিদাবাদের শ্রমিকরা বলেছিলেন, তাঁরা আবার কাশ্মীরে যাবেন, যেতে হবে, নইলে সংসার চলবে না।
অনন্ত জাগে। এবং এগিয়ে যায়।
চেরনোবিলের দুর্ঘটনায় আধারিত একটি সিরিজ়ের শেষার্ধে চেরনোবিলের বিষাক্রান্ত কমিউনিস্ট নেতা বসে থাকেন বেঞ্চে। যিনি জানেন, আর এক বছর তাঁর আয়ু। পকেটে রক্তের ছোপ লাগা রুমাল। তাঁর ট্রাউজ়ার্স বেয়ে উঠতে থাকে একটি সবুজ পোকা, কিলবিল করে। টোকা দিয়ে ফেলে দেওয়ার বদলে তিনি আঙুলে তুলে নেন তাকে, বলেন, “দিস ইজ় বিউটিফুল।” বসন্তে শিমুল, রুদ্রপলাশ, পলাশ ছেয়ে গিয়েছিল কলকাতা। এখনও কত ফুল, স্ট্রবেরি মুন, আকাশের রং। আমরা দেখি। দক্ষিণ শহরতলির হাসপাতালে তখন লাইন দিয়ে ঢুকছিল অ্যাম্বুল্যান্স, অটো, টোটো, রিকশা, গাড়ি। করোনা আক্রান্তেরা, কারও মুখ দিয়ে ফেনা বেরোচ্ছে। হাউ হাউ করে কাঁদছেন তরুণী কন্যা। হাসপাতালে ভর্তি করে বাইরের চাতালে অপেক্ষা করতে করতে তিনিও দেখেন গাছ, ফুল। আকাশে পূর্ণ চন্দ্র। দেখেন কিন্তু দেখেন কি? মধ্যরাতে রাস্তা চিরে সাইরেন বাজিয়ে ছুটে যাচ্ছিল যে অ্যাম্বুল্যান্স, তার মধ্যে থাকা রোগী, আত্মীয় কি দেখেছিলেন, আকাশ তখন জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে। সর্বশক্তি দিয়ে বাঁচতে চাওয়া ক্যানসার আক্রান্ত যখন কেমো নিতে যেতেন, রাস্তার ধারে ফুটে থাকা অজস্র হলুদ ফুল দেখে বলতেন, “কলকাতায় কত ফুল দেখেছিস।”
আমরা যারা বাঁচলাম, যারা বাঁচব, তারা যেন জানি যে, একটি মৃত্যুও মৃত্যুই। সংখ্যা নয়, আমরা মানুষকে হারিয়েছি। অসংখ্য। নামহীন নন। নাম। নাম। গণচিতায় কারা পুড়লেন? তাঁরা নাম, নাম, নাম, পরিবার।
কাদের নীতি-পঙ্গুতায় মানুষ সব লজ্জা জলাঞ্জলি দিয়ে মাঠের ধারে অযত্নে গজিয়ে ওঠা কচুর গোড়া তুলে বিক্রি করতে বাধ্য হল?
অনন্ত জাগে।
অনন্ত এ ভাবেই জাগে?
Advertisement

Related Keywords

China , Murshidabad , West Bengal , India , Calcutta , Ottawa , Ontario , Canada , O Sal Bihar , Taslima Nasrin , Junior , Center The Government Bahadur , Chili , Small News , Delivery Boy , Where They , Working State , Government Bahadur , Water Lily , Green Beetle , Strawberry Moon , How , சீனா , முர்ஷிதாபாத் , மேற்கு பெங்கல் , இந்தியா , கால்குட்டா , ஆடவா , ஆஂடேரியொ , கனடா , டஸ்லிமா நஸ்ரின் , ஜூனியர் , மிளகாய் , சிறிய செய்தி , டெலிவரி சிறுவன் , எங்கே அவர்கள் , தண்ணீர் லில்லி , பச்சை வண்டு , ஸ்ட்ராபெரி நிலா , எப்படி ,

© 2024 Vimarsana