টিয়া পাখি&#x

টিয়া পাখির অভিমান | 1054778 | কালের কণ্ঠ


ওয়াশরুমে ঢোকার আগে মোবাইল দুটো আমি বিছানার ওপর রেখেছিলাম। একটা ফোনে চিটাগাংয়ে কথা বলছিলাম, আরেকটা ফোন ছিল হাতে। কথা শেষ করে দুটোই বিছানায় ছুড়ে ফেলে ওয়াশরুমে ঢুকে গিয়েছিলাম। ফোন দুটো সাইড টেবিলে রাখল কে? একদম গুছিয়ে পাশাপাশি সুন্দর করে রাখা!
এই ফ্ল্যাটে তো আমি ছাড়া কেউ নেই। তিন দিন হলো উত্তরার এই ফ্ল্যাটটায় আমি উঠেছি। লেকের ধারে সুন্দর ছয়তলা বিল্ডিংয়ের তিনতলায় ফ্ল্যাট। ফুল ফার্নিশড। ফার্নিশড বলেই, বলতে গেলে অনেকটা জোর করে ভাড়া নিয়েছি। মালিক ভদ্রলোক ভাড়া দিতে চাননি। এভাবেই ফেলে রাখতে চেয়েছিলেন। নিজেরা হয়তো মাঝে মাঝে এসে থাকবেন, এ রকম প্ল্যান হয়তো ছিল। পুরনো বাসস্থানের প্রতি মায়া থেকে যায় না মানুষের!
তিন বেডরুমের পনেরো শ স্কয়ারফিটের ফ্ল্যাট। আমার একার জন্য চমৎকার। মালিক ভদ্রলোক খুব সুন্দর করে সাজিয়েছিলেন ফ্ল্যাটটি। আসবাবপত্র এবং সাজানো-গোছানোতে সুরুচির ছাপ। তিনি বাড়ি করেছেন নিকুঞ্জে। তিনতলা। ছবির মতো ছোট্ট বাড়ি। স্বামী-স্ত্রী আর কাজের লোকজন থাকে। ভদ্রলোকের নাম মুনিরুজ্জামান। তাঁর একটাই ছেলে। ছেলে থাকে আমেরিকায়।
মুনিরুজ্জামান সাহেব মাঝারি সাইজের ব্যবসায়ী। ডেভেলপার। ঢাকার বিভিন্ন লোকেশনে তিন-চারটা কাজ তাঁর সব সময়ই চলে। পরিচ্ছন্ন স্বভাবের মানুষ। ব্যবসাটাও করেন পরিচ্ছন্নভাবে। তাঁর এই ব্যবসায় ফাঁকিজুকির প্রচুর অবকাশ থাকে। তিনি ওসবের মধ্যে থাকেন না। আমার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল চিটাগাংয়ে। আমার সব কিছুই চিটাগাংনির্ভর। চিটাগাং পোর্টে ঠিকাদারির ব্যবসা করি। সেই ব্যবসার কাজে প্রায়ই ঢাকায় আসতে হয়। এসে হোটেলে উঠতাম। পাঁচ-সাত দিন, দশ দিন একটানা থাকতে হলে বেশ ভালো একটা খরচ হয় হোটেলে। তার চেয়ে একটা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকা ভালো। চিটাগাং থেকে আমার বহুদিনের পুরনো লোক এনায়েতকে নিয়ে আসলেই হবে। সে আমার দেখাশোনা করবে। ঢাকায়ও ব্যবসা করার কথা ভাবছি। ঘন ঘন আসতে হবে। সুতরাং এনায়েতকে ফ্ল্যাটেই রেখে দেব।
এই সব ভাবনা থেকেই ফ্ল্যাটটা নেওয়া। আমার স্ত্রী ডাক্তার। চিটাগাং মেডিক্যালে গাইনি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর। তাঁর নাম আফরিন। আমার পাঁচ বছরের মেয়েটির নাম রূম্পা। সে কিন্ডারগার্টেনে পড়ে। আমাদের যৌথ পরিবার। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। আন্দরকিল্লায় পুরনো আমলের বড় বাড়ি। সেখানে মা-বাবার সঙ্গেই আমি থাকি। একমাত্র ছেলের মা-বাবাকে ছেড়ে অন্যত্র থাকা ঠিক না। আমার মা-বাবা আফরিনকে আপন মেয়ের মতো ভালোবাসেন। আর রূম্পা হচ্ছে তাঁদের চোখের মণি। নাতনি বলতে অজ্ঞান দুজনে।
কিন্তু মোবাইল সেট দুটো সাইড টেবিলে গেল কী করে? কে রাখল ওখানে?
এখন রাত সোয়া দশটা বাজে। ওয়েস্টিনে আমার একটা মিটিং ছিল সন্ধ্যাবেলা। সেখানে ডিনার করে এসেছি। যেহেতু এনায়েতকে এখনো আনা হয়নি, ফ্ল্যাটে রান্নাবান্নার ব্যবস্থা নেই। শুধু ব্রেকফাস্টের জিনিসপত্র আমি কিছু কিনে রেখেছি। লাঞ্চ-ডিনার বাইরেই করি। আরো কয়েক দিন থাকতে হবে ঢাকায়। তারপর ফিরে যাব চিটাগাংয়ে। এ মাসে আবার আসব। তখন এনায়েতকে সঙ্গে করে নিয়ে আসব।
একা একা থাকতে আমার অবশ্য কোনো অসুবিধা হয় না। ফ্ল্যাটটাকে হোটেলের মতোই মনে হয়। দিনের বেশির ভাগ সময় তো বাইরেই থাকি। শুধু রাতের বেলা এসে ফ্ল্যাটে ঘুমাই। ফার্নিশড ফ্ল্যাট পাওয়ায় সুবিধা হয়েছে। কিছুই কিনতে হয়নি। ভাড়াও রিজনেবল। ব্যবস্থা একেবারে হোটেলের মতো।
কিন্তু মোবাইল সেটের ব্যাপারটা তো বুঝতে পারছি না! বাইরে থেকে এসে জামা-কাপড় বদলে মোবাইলে কথা শেষ করে দুটো সেটই তো বিছানায় ছুড়ে ফেললাম। সেই জিনিস সাইড টেবিলে গেল কী করে?
আসলেই কি আমি ফোন দুটো বিছানায় ছুড়ে ফেলেছিলাম, নাকি নিজেই ওভাবে সাইড টেবিলে রেখেছি!
তা-ই হবে। আমারই ভুল। আমিই সাইড টেবিলে রেখেছি। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মনে হচ্ছে বিছানায় ছুড়ে ফেলেছিলাম। এ নিয়ে ভাববার কিছু নেই। সারা দিন এত রকম কাজে ব্যস্ত থাকি, এত কথা বলতে হয় লোকের সঙ্গে, এই সব কারণে ভুলভাল হতেই পারে। ফোনের ব্যাপারটা নিশ্চয় আমার ভুল। বিছানায় না, আমিই আসলে সাইড টেবিলে রেখেছি।
ভাবনাটা মন থেকে ফেলে শুয়ে শুয়ে কিছুক্ষণ টিভি দেখলাম। তারপর টিভি অফ করে ম্যাটমেটে জ্যোত্স্না রঙের ডিমলাইট জ্বেলে ঘুমিয়ে পড়লাম। আমার ঘুম বেশ গাঢ়। শোয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘুমিয়ে যাই। রাতে একবার হয়তো ওয়াশরুমের জন্য উঠি। তারপর আবার ঘুম। একটানা সকাল আটটা পর্যন্ত ঘুমাই। ভালো ঘুমের কারণ হলো, বিছানায় যাওয়ার পর মাথা থেকে যাবতীয় চিন্তা টেনশন সব কিছু আমি ফেলে দিই। মনোভাবটা এ রকম, যা হওয়ার হবে। ফোন দুটো মিউট করে দিই, যাতে কেউ ফোন করলেও ধরতে না হয়। এ জন্য অবশ্য মাঝে মাঝে আফরিন একটু বিরক্ত হয়। কারণ সে দু-একবার রাত বারোটার পর ফোন করে কোনো জরুরি কথা বলতে চেয়েছে। আমি তো আমার মতো ঘুমাচ্ছি, ওর ফোন রিসিভই করিনি! তবে ভালো ঘুমের কারণে আমার শরীর ঠিক আছে। সকালবেলা উঠে ফ্রেশ হওয়ার পর নিজেকে নতুন মানুষ মনে হয়।
পরদিন সকালেও নিজেকে খুব ফ্রেশ লাগছিল। নিজ হাতে এক মগ কফি বানালাম। পাউরুটি টোস্ট করলাম। তারপর বাটার জেলি মাখিয়ে বেশ তৃপ্তি করে নাশতাটা করলাম। ডাইনিংটেবিলটা সুন্দর। মোটা গ্লাসের চারজন বসার টেবিল। কফি খেতে খেতে আমি তাকিয়ে তাকিয়ে ড্রয়িংরুমের দিকটা দেখছিলাম। ওদিককার সাদা দেয়ালে সুন্দর একটা পেইন্টিং। গাছের ডালে দুটো পাখি বসে আছে। কী পাখি বোঝা যায় না। তবে যে শিল্পী এঁকেছেন তাঁর আঁকার হাত চমৎকার। আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ছবিটা দেখতে লাগলাম।
আরে, ছবিটা তো একটু বাঁকা হয়ে আছে। উঠে গিয়ে সোজা করে দেব নাকি।
না থাক। সকালবেলা কিছুক্ষণ আমার কোনো কাজ করতে ভালোই লাগে না। বিছানাটাও এলোমেলো হয়ে আছে। থাক, অসুবিধা কী। রাতের বেলা ফিরে আমিই তো ব্যবহার করব! বিছানার ওপর পড়ে আছে রাতে পরা ট্রাউজার আর টি-শার্ট। আজ রাতও ও দুটো পরেই কাটিয়ে দেব। কাল অন্য ট্রাউজার আর টি-শার্ট বের করব। যেহেতু আরো কয়েক দিন থাকতে হবে, সেহেতু দু-তিন দিন পর বাড়ির সিকিউরিটির লোকদের দিয়ে কাপড়চোপড় সব লন্ড্রিতে পাঠিয়ে দেব।
ঢাকায় এলে আমার বন্ধু নিয়াজ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একটা গাড়ি দিয়ে রাখে। রাতের বেলা ড্রাইভারকে ছেড়ে দেওয়ার সময় বলে দিই সকালে কটায় আসতে হবে। আজ বলেছি নটায় আসতে।
ড্রাইভারের নাম শাজাহান। খুবই সময় মেনে চলা লোক। ঠিক নটায় এসে ঢুকল। সিকিউরিটির লোক ইন্টারকমে জানাল, স্যার, আপনার গাড়ি আসছে। রেডি আমি হয়েই ছিলাম। ফ্ল্যাট লক করে বেরিয়ে যেতে দু-তিন মিনিটও লাগল না।
ধাক্কাটা খেলাম রাতে ফ্ল্যাটে ফিরে। বেডরুমে ঢুকে দেখি বিছানাটা পরিপাটি করে গোছানো। আমার স্বভাব একটা চাদর গায়ে দিয়ে ঘুমানো। সেই চাদরটা যত্নে পায়ের কাছে ভাঁজ করা। ট্রাউজার আর টি-শার্টটাও ভাঁজ করে এক পাশে রাখা।
এ কী করে সম্ভব! ফ্ল্যাটে কি কেউ ঢুকেছিল? সেই সম্ভাবনা তো নেই। দুই সেট চাবির এক সেট থাকে আমার পকেটে, আরেক সেট হ্যান্ডব্যাগে। অন্য কারো পক্ষে ফ্ল্যাট খোলা সম্ভবই না। নাকি তৃতীয় কারো কাছে এক সেট চাবি আছে? সে এসে খুলে সব পরিপাটি করে রেখে গেছে! কিন্তু কোন স্বার্থে সে তা করবে? আমি তো এমন কাউকে রাখিনি!
বেশ একটা চিন্তায় পড়ে গেলাম। ইন্টারকমে নিচে সিকিউরিটির লোকদের সঙ্গে কথা বললাম। বাড়িটায় তিনজন সিকিউরিটির লোক। একেকজন আট ঘণ্টা করে ডিউটি করে। গেটের সঙ্গেই তাদের থাকার রুম। আজ রাতে যে ডিউটি করছে তার নাম সামসু। সামসুকে জিজ্ঞেস করলাম, আমার ফ্ল্যাটের আরেক সেট চাবি কি কারো কাছে আছে?
লোকটা আকাশ থেকে পড়ল। না তো স্যার। আপনার ফ্ল্যাটের চাবি অন্য কারো কাছে থাকবে কেন? কেন, কী হয়েছে স্যার?
ব্যাপারটা আমি চেপে গেলাম। না, এমনি জানতে চাইলাম। ঠিক আছে সামসু।
চিন্তিত ভঙ্গিতে বেডরুমে এলাম। প্রায় এগারোটা বাজে। রাতের কাজগুলো শেষ করে শুয়ে পড়লাম। আজ আর টেলিভিশন দেখতে ভালো লাগল না। বিছানায় শুয়ে ব্যাপারটা নিয়ে অনেকক্ষণ ভাবলাম। ঘটনাটা আসলে কী? নিশ্চয়ই কেউ এসে এই ফ্ল্যাটে ঢুকেছিল। ঢুকে আমার বিছানা গুছিয়ে রেখে গেছে। কিন্তু কে আসবে? এলে তো সিকিউরিটির লোকরা দেখত? তারা কেউ কাউকে দেখেনি। আর কার এমন কী স্বার্থ থাকতে পারে যে আমার ফ্ল্যাটে ঢুকে বিছানা গুছিয়ে রেখে যাবে? এই বাড়িতে বা বাড়ির কোনো ফ্ল্যাটে চোর ঢোকা সম্ভব না। আর যদি চোর ঢুকেও থাকে তাহলে সে চুরি না করে বিছানা গুছিয়ে রেখে যাবে কেন?
ভৌতিক ব্যাপারস্যাপারে আমার বিশ্বাস নেই। ভূত আছে কি নেই, ওসব নিয়ে কখনো ভাবিইনি। অনেক রকমের অনেক ভূতের গল্প বিভিন্নজনের মুখে শুনেছি। শুনে বিশ্বাস করিনি, মনেও রাখিনি। ভয় তো পাইইনি। নিজের জীবনে ও রকম কোনো অভিজ্ঞতাও নেই। কিন্তু আজকের এই ব্যাপারটার অর্থ কী?
যা ইচ্ছা হোক গিয়ে, এত কিছু ভাবতে পারব না। মাথা থেকে চিন্তাটা ফেলে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন সকালে নিজের কাজগুলো করার ফাঁকে ফাঁকে বিছানা গোছানোর ব্যাপারটা নিয়ে খুব ভাবলাম। কোনো কূল-কিনারা পেলাম না। ব্যাপারটা আসলে কী? ও রকম কি সত্যিই ঘটেছে? নাকি সবই আমার কল্পনা? আসলে বিছানা গোছানোই ছিল না। আমার দৃষ্টিবিভ্রম ঘটেছিল। হোটেলে থাকলে যা হয়, সকালবেলা বেরিয়ে যাওয়ার পর হাউসকিপিংয়ের লোক এসে রুম গুছিয়ে দিয়ে যায়। আমি এই ফ্ল্যাটে থাকছি ঠিকই, আমার অবচেতন মন হয়তো ভাবছে আমি কোনো হোটেলেই আছি। এই কারণে হয়তো দৃষ্টিবিভ্রম হয়েছে। এ ছাড়া তো আর কোনো কারণ দেখি না। ঠিক আছে। আজ ব্যাপারটা আবার পরীক্ষা করব। আজও যদি একই কাণ্ড ঘটে তাহলে বুঝব কোথাও কোনো গণ্ডগোল হচ্ছে।
শাজাহান গাড়ি

Related Keywords

United States , Sabuwa , Sulawesi Selatan , Indonesia , Islampur , West Bengal , India , Calcutta , Padma , Jharkhand , Israel , Jakarta , Jakarta Raya , Uttara Samsun , Reshma Cole , Junior , University Ab , School Her , Corner Charity , Hotel As , Name Muniruzzaman , His Name Afrin , Her Name , Law Not , Single , Name Shahajhan , Her Name Samsun , English Book , Being Meyer , Light Clear View , Power Not , Sir Rahman , Sir His , Whatever Sir , Ellen Rahman , Light Denim , For Samsun , Her Age , Name Reshma , May Random , For Halima , Name Farhan , Her But , Class Seven , Class Nobody , For Rails , Where May , Farhan United States , Elephant Road , Sat Her , Factor For , View For , For Reshma , ஒன்றுபட்டது மாநிலங்களில் , இந்தோனேசியா , இஸ்லாம்பூர் , மேற்கு பெங்கல் , இந்தியா , கால்குட்டா , பத்மா , ஜார்கண்ட் , இஸ்ரேல் , ஜகார்த்தா , ஜகார்த்தா ராய , ஜூனியர் , பள்ளி அவள் , அவள் பெயர் , ஒற்றை , ஆங்கிலம் நூல் , பவர் இல்லை , ஐயா ரஹ்மான் , ஒளி டெனிம் , வர்க்கம் ஏழு , யானை சாலை , பார்வை க்கு , க்கு ரேஷ்மா ,

© 2025 Vimarsana