Anandabazar Staying with weak Afghanistan Army led Danish Siddiqui to his death Danish Siddiqui: নড়বড়ে আফগান সেনার সঙ্গে থাকাই কি কাল হল দেশকল্যাণ চৌধুরী ১৮ জুলাই ২০২১ ০৫:৪৬ দানিশ সিদ্দিকি দানিশ সিদ্দিকি চলে যাওয়ার খবরটা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই মারাইয়ের কথা মনে পড়ছিল। ২০১৮ সালের এপ্রিলে কাবুল শহরের কাছেই বোমা বিস্ফোরণ ‘কভার’ করতে গিয়ে মারা গিয়েছিল শাহ মারাই। ও ছিল আমার বিশেষ বন্ধু। আর দানিশের সঙ্গে আলাপ সোশ্যাল মিডিয়ায়। আসলে বিপদের সঙ্গে ঘর করার কাজ যে বেছে নিয়েছে, সে তো সাগরে পেতেছে শয্যা! শনিবার ফোন করেছিলাম সাজ্জাদকে। সাজ্জাদ হোসেন এখন কাবুলে, গত সপ্তাহে এক মাসের ভিসা নিয়ে গিয়েছে। একটি বিদেশি সংস্থার হয়ে কাজ করছে। সাজ্জাদ কাশ্মীরের ছেলে। জঙ্গি বাহিনী, সেনা, বোমা, গ্রেনেড, গুলি— ওর কাছে নতুন নয়। যাঁরা এই উপমহাদেশে সংবাদ সংস্থায় কাজ করেন, তাঁদের কাশ্মীর, আফগানিস্তান যেতেই হয়। আমাকেও যেতে হয়েছে একাধিক বার। সাজ্জাদ এর আগেও আফগানিস্তান গিয়েছে। শনিবার যখন সাজ্জাদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, ও তখন কাবুল বিমানবন্দর থেকে ফিরে ছবি ফাইল করছে। ফ্রান্সের দূতাবাসের কর্মীদের ফেরত যেতে বলেছে সে দেশের সরকার। সেটাই ‘কভার’ করতে গিয়েছিল সাজ্জাদ। বলল, ‘‘এয়ারপোর্ট যাওয়ার রাস্তায় ট্র্যাফিক জ্যাম ছিল। দূরে একটা জায়গা থেকে ধোঁয়া উঠছে, দেখলাম। বিস্ফোরণ হয়েছে। অফিসের নীতি অনুযায়ী ওই দিক দিয়ে যাওয়া যাবে না বলে ড্রাইভার জানিয়ে দিল। আবার অন্য দিক দিয়ে ঘুরে এয়ারপোর্টে গেলাম। অথচ কিছু বছর আগে এই ঘটনা শুনলে কত দ্রুত স্পটে পৌঁছব, এটাই ভাবতাম। এখন প্রশ্নই ওঠে না। আগে জীবন।’’ মনে পড়ল, এমনই বিস্ফোরণের পরে ছবি তুলতে গিয়ে ফের বিস্ফোরণে মারা যায় মারাই। সাজ্জাদের কথায়, ‘‘আমি প্রায় রোজ কিছু ক্ষণ শহরের মধ্যেই ঘুরে ছবি তুলে ফিরে আসি। শহরের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করি না। অনুমতি নেই। কোথাও যাওয়ার আগে কোথায় যাব, কত ক্ষণ থাকব, সঙ্গে কোন ড্রাইভার যাবে, কত ক্ষণের জন্য বেরোব, অফিসের নেটওয়ার্কে তার বিবরণ জমা দিতে হয়। ব্যুরো চিফ তা দেখলে তার পর বেরনো যায়। এখন শহরে আগের মতো শ্বেতাঙ্গ বন্দুকধারী নজরে পড়ে না। যে সামান্য ন্যাটোবাহিনী এখনও রয়েছে, তারা মূলত বিদেশি দূতাবাস এবং পার্লামেন্টের বিশেষ দায়িত্বে যুক্ত। রাস্তাঘাটে আর তাঁদের দেখা পাওয়া যায় না। কারও ছবি তুলতে হলে আগে ড্রাইভার মারফত কথা বলে অনুমতি নিয়ে তবেই ছবি তোলা সম্ভব। নয়তো বিপদ ঘটে যেতে পারে।’’ Advertisement Advertisement ২০১০ সালে শেষ বার আমি যখন কাবুল গিয়েছি, চিকেন স্ট্রিট ছিল আমাদের বিকেলের আড্ডা এবং খাওয়ার জায়গা। মারাই, আমি, আমাদের রিপোর্টার (তখন আমি বিদেশ সংবাদ সংস্থায় কাজ করতাম), অন্যান্য সংবাদ সংস্থার ফটোগ্রাফার— সকলে মিলে খাওয়াদাওয়া, আড্ডা হত। সে এখন কল্পনারও অতীত। সাজ্জাদ যা বলল, দলে দলে লোক লাইন দিয়ে পাসপোর্ট তৈরি করছে বা রিনিউ করছে। একমাত্র উদ্দেশ্য দেশ ছেড়ে পালানো। কিন্তু যেতে পারবেন তো হাতেগোনা ধনীরা। বাকিদের তো এখানেই থাকতে হবে। তালিবান জমানা কেমন ছিল, তা কেউ ভোলেননি। তাই আতঙ্কে, চাপা উত্তেজনায় থম মেরে আছে কাবুল। সাজ্জাদ বয়সে আমার থেকে অনেকটাই ছোট। কাশ্মীরে ওর সঙ্গে কাজ করেছি। অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং ঠান্ডা মাথার চিত্রসাংবাদিক। কাজ করে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে কী ভাবে বেরিয়ে যেতে হয়, তা ওর কাছ থেকেই শিখেছি। কাশ্মীর ওকে অভিজ্ঞ করেছে। বলছিল, ‘‘২০১৯ সালের নির্বাচনেও আফগানিস্তানে এসেছি। কিন্তু কাবুলকে এতটা গুটিয়ে যেতে দেখিনি।’’ দানিশের কথায় ফিরে যেতেই উঠল আফগান সেনার সঙ্গে থাকার সমস্যার কথা। আমি নিজে ডাচ সেনাবাহিনীর সঙ্গে ‘এম্বেডেড’ থেকেছি, উরুজগণ প্রদেশে মোল্লা ওমরের গ্রাম ঘুরে দেখে এসেছি। বিপদ জানান দিয়ে যেত প্রতি মুহূর্তে, কিন্তু কোথাও যেন একটা বিশ্বাস, আস্থা ছিল যে বড় বিপদে পড়ব না। সাজ্জাদ বলছিল, আফগান বাহিনীর সঙ্গে থাকলে সেই আস্থা তেমন পাওয়া যায় না। কারণ, আফগান বাহিনী সব দিক থেকেই নড়বড়ে আর মানসিক ভাবে তালিবানের সঙ্গে লড়াই করার জোর-ই নেই তাদের। এই অবস্থায় আফগান বাহিনীর সঙ্গে ‘এম্বেডেড’ থাকার ঝুঁকি অনেক বেশি। দানিশকে হয়তো তারই মূল্য দিতে হল। Advertisement