যথারীতি মিফতাহ ভাই (৯৯-০৫)। _____________________________________________________________ কী দেখছি: অনেক কিছুই তো দেখছি রোজ, কিছু মনে রাখার মতো, কিছু ভুলে যাবার জন্যই। কি দেখছি পর্বটা আসলে পর্দায় কি দেখছি তা নিয়েই। বড় পর্দায় আমার একটু সমস্যা আছে, মাথা ধরে যায় কেন যেন। তাই ল্যাপটপের ছোট পর্দাই আমার আয়েশ মাখা অলস দুপুরের সঙ্গী, নিশি যাপনেও তার বিকল্প নেই (আঙ্গুর ফল টক বলতে পারেন, ঘরে কোন ৪০-৫০ ইঞ্চি টিভি নেই)। প্রায় মাস ছয়েক ধরে অনেক খুঁজে, অনেক বেছে গোটা চারশো সিনেমা জমিয়েছিলাম আমার পেট-মোটা হার্ড ড্রাইভে। বলা নেই, কওয়া নেই ব্যাটা একদিন সবকিছু হজম করে দিতে শুরু করলো; জানলাম এরই নাম হার্ড-ড্রাইভ ক্রাশ!!! কোন রকমে গোটা শয়েক ছবি উদ্ধার করেছি, কিন্তু দরকারি অনেক কিছুই গায়েব। সেখান থেকেই নেড়েচেড়ে কিছু দেখাদেখি চললো পেছনের ক’দিন। রিভিউ নয়, বরং আমার অনুভূতির সার-সংক্ষেপই বলি: ভারতীয় জাতীয় চলচ্চিত্রে পুরষ্কার জিতে নেয়া সিনেমা ‘আবহমান’, পরিচালক- ঋতুপর্ণ ঘোষ। বয়সী পরিচালকের অসম প্রেম কিংবা পারিবারিক সম্পর্কের এক অন্যরকম ছবি। পরিচালক অনিকেতের ভূমিকায় দারুণ মিশে গিয়েছেন দীপঙ্কর দে। বারবার নানা প্রশ্ন, দাম্পত্য জটিলতার মধ্যে পড়েও কেন যেন কখনো শিখার সাথে তার সম্পর্কের কথা অনিকেত পরিষ্কার করে বলেননি। বরং জীবনের শেষ ভাগে এসে ছেলের (অপ্রতিম) কাছে নিজের দায়বদ্ধতা স্বীকার করে গিয়েছেন। তরুণ অভিনেত্রীর শিখার চরিত্রে মমতা শঙ্করের অভিনয়ও নজর কাঁড়া ছিল। বোদ্ধা নই, অনেকটা নিজের তৃপ্তির জন্যই দেখেছি, তাই তেমন কোন আঙ্গিক বিশ্লেষণ আমাকে দিয়ে সম্ভব হবে না। সত্য বলতে গেলে এখনো শিখছি। তবে, “আবহমান”- নিয়ে মাসুম ভাইয়ের এই লেখাটায় চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। **** **** **** **** **** **** **** **** **** **** স্প্যানিশ ঘরানার সিনেমা, পরিচালক- পেদ্রো আলমোদোভার। বিদেশী ভাষার ছবি হিসেবে এটাই আমার প্রথম স্পেনিয়ার্ড সিনেমা। এবং বলতেই হয়, আমি মুগ্ধ। কাহিনীর স্বাতন্ত্র্য, অভিনয়-শিল্পীদের পারদর্শিতা এবং সর্বোপরি দক্ষ পরিচালকের অনন্যতার সমন্বয়- এই তিনে মিলে দুর্দান্ত একটা মাস্টারপিস (আমার কাছে) “অল অ্যাবাউট মাই মাদার”। হঠাৎ করেই কিশোর ছেলের মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েন সিঙ্গেল মাদার ম্যানুয়েলা (সিসিলিয়া রোথ)। বেরিয়ে পড়েন বহু বছর আগে ছেড়ে চলে যাওয়া স্বামীর সন্ধানে। কাহিনী মধ্যপথে একটু ধীরগতির হয়ে গেলেও দর্শককে পর্দায় ধরে রাখবার যথেষ্ট উপকরণ ছিল। তরুণী নানের চরিত্রে পেনোলোভা ক্রুজও অনবদ্য ছিলেন (পুরো সিনেমায় আমার একমাত্র পূর্ব-পরিচিত অভিনেত্রী; মানে আগেও যার অভিনয় দেখবার সুযোগ হয়েছে)। ঘটনাচক্রে, ক্রুজ গর্ভবতী হয়ে পড়েন, দায় বর্তায় ম্যানুয়েলার স্বামী লোলের উপর। জন্ম নেয় শিশু এস্টিবান (নাম রাখা হয়েছিল ম্যানুয়েলার মৃত ছেলের নামে), কাহিনী আবর্তিত হতে থাকে এস্টিবান ও ম্যানুয়েলাকে নিয়েই। পুরোটা আর বলছি না, দেখবার জন্য সবিশেষ অনুরোধ রইলো। পরিচালক ছবিটা উৎসর্গ করেন এভাবে- “পৃথিবীর সকল অভিনেত্রীদের যারা অভিনেত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন, সকল নারীকে যারা অভিনয় করে, সকল পুরুষকে যারা অভিনয় করেন এবং নারীতে রূপান্তরিত হন (এখানে একটু বোঝার সমস্যা আছে আমার, সম্ভবত তিনি নারী চরিত্রে রূপান্তর বুঝিয়েছেন), সকলকে যারা মা হতে চায়। এবং আমার মাকে।” (To all actresses who have played actresses. To all women who act. To men who act and become women. To all the people who want to be mothers. To my mother.”) (তথ্যসূত্র: Wikipedia) **** **** **** **** **** **** **** **** **** **** Hard Candy (2005) মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলার হার্ড ক্যান্ডি মূলত দুটো চরিত্রকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। ১৪-১৫ বছরের বালিকা হেইলে এবং ত্রিশোর্ধ্ব ফটোগ্রাফার জেফ কোভলার। হেইলের চরিত্রে অ্যালেন পেইজকে দেখেই আগ্রহী হয়েছিলাম; বলা বাহুল্য যে, আগ্রহে খুব একটা জল ঢালেনি ইনসেপশন খ্যাত এই অভিনেত্রী। আসলে পুরো সিনেমাটাতেই সংলাপ, কাহিনী আবর্তিত হয়েছে এই দু’জনকে নিয়েই। ইন্টারনেটে চ্যাটে প্রলুব্ধ হয়ে (কিংবা বলতে পারেন ইচ্ছাকৃত ভাবে প্রলুব্ধ হয়ে) দেখা করবার আহবান পায় কিশোরী হেইলে। ক্যাফেতে দেখাও হয়, সেখান থেকে জেফের ব্যক্তিগত স্টুডিওতে ছবি তোলবার জন্য রাজি হয়ে যায় হেইলে। এক সময় ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে ড্রিঙ্কস বানিয়ে দেয় জেফকে। জেগে উঠে নিজেকে বন্দি অবস্থায় আবিষ্কার করে জেফ। জানা যায়, জেফের স্পর্শকাতর জীবন; কিশোরী মেয়েদের ছবি তোলার কথা বলে প্রলুব্ধ করে যৌন নিপীড়নের কথা। হেইলে বারবার জেফকে দায়ী করতে থাকে ডোনা নামের অপর এক নিখোঁজ কিশোরীর অন্তর্ধানের জন্য। অবশেষে নানা পরিক্রমায় সিনেমার শেষ হয় জেফের আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে; বলে রাখা ভালো এটাও কিশোরী হেইলের পরিকল্পনার অংশ ছিল। আমার কাছে হেইলের চরিত্রে অ্যালান পেজের অভিনয় যথেষ্ট শক্তিশালী এবং স্পর্শী মনে হয়েছে। স্বল্প বাজেটের চলচ্চিত্র হিসেবে মাত্র উনিশ দিনে শেষ করা হার্ড ক্যান্ডি অনেকটাই যেন প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার অসঙ্গতির প্রতি ছুড়ে দেয়া চপোটঘাত। তীক্ষ্ণ অভিনয় শৈলী এবং দৃশ্যপটই আমার কাছে এছবির মূল চালিকাশক্তি ছিল। _____________________________________________________________ কী পড়ছি: দেশ ছাড়বার পর থেকেই সেভাবে বাংলা বই হাতে পাওয়া হয়নি। ফলে পাঠ্যের বাইরে যতটুকু পড়া তা এই ব্লগ-পরিমণ্ডল এবং নেট ঘেঁটে খুঁজে নেওয়া স্ক্যান করা কিংবা পিডিএফ বইগুলোই। এই কাজ করতে গিয়ে চোখের বারোটা বাজিয়েছি, এখন ১৫ মিটারের দূরের ব্ল্যাকবোর্ডের লেখাও ঝাপসা লাগে। যা বলছিলাম, হাতে ধরে পাতা উলটে উলটে বই পড়বার যে স্বাদ তা অনেকদিন যাবত হারিয়ে ফেলেছিলাম। পরীক্ষা শেষে তাই একটু পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চললো। টরন্টোতে দুটো লাইব্রেরীর বিদেশি ভাষার সেকশনে বাংলা বই পাওয়া যায়, যদিও সংগ্রহ খুব একটা বড় নয়। সেখান থেকেই হাতড়ে নিয়ে পড়েছি; জহির রায়হানের উপন্যাস সমগ্র। বরফ গলা নদী, শেষ বিকেলের মেয়ে, আরেক ফাল্গুন, তৃষ্ণা, হাজার বছর ধরে, আর কত দিন, কয়েকটি মৃত্যু, একুশে ফেব্রুয়ারি- এই উপন্যাসগুলো নিয়েই পুরো বই। ক্লাস নাইন টেনেই হাজার বছর ধরে পড়া হয়েছিল; মামার বুক শেলফ থেকে মেরে দিয়ে পড়েছিলাম বরফ গলা নদী আর শেষ বিকেলের মেয়ে। বাকীগুলোও এবার ঝুলি পূর্ণ করলো। বাংলা সাহিত্য কিংবা চলচ্চিত্র দু’পক্ষকেই আরো অনেক কিছুই দেবার ছিল জহির রায়হানের। সহজ কলমে এত শক্তি, এত গভীরতা মুগ্ধ চিত্তে কাতর করে রাখে। পূর্ব বাংলার আধুনিক যুগের ঔপন্যাসিকদের মধ্যে তিনি বেশ উঁচু আসন নিয়ে নিয়েছেন তাঁর ঐ স্বল্প সৃষ্টিতেই। **** **** **** **** **** **** **** **** **** **** স্বদেশী লেখিকা সাজিয়া ওমরের ইংরেজিতে লেখা “লাইক অ্যা ডায়মন্ড ইন দ্যা স্কাই” ই’বের বদৌলতে হাতে পেয়েছি। উপন্যাসের শুরুটা বেশ গতিশীল ছিল, কিন্তু মাঝপথে গিয়ে কিছুটা ধীর লয়ে চলেছে। উচ্চবিত্তের মাদকাসক্ত তারুণ্য, যৌবনের উন্মত্ততা- এসবের মাঝেও সাজিয়া বেশ নিপুণ হাতেই কিছু প্রেক্ষাপট, কিছু চরিত্রের জীবন মৃত্যু; জৈবিক-মানসিক চাহিদার সমাবর্তন ঘটিয়েছেন। মূল চরিত্র দ্বীন, এক সময়কার ভালো ছেলে পরিচয় ঝেড়ে ফেলে কামাল আতার্তুক অ্যাভিনিউ-এর কোনে তাকে দেখা যায় সিগারেট হাতে ছিনতাইয়ের শিকার খুঁজতে। বন্ধু এ.জে’কে নিয়ে হারিয়ে যায় বস্তির ভিড়ে পসরা সাজানো মাদক-ব্যবসায়ীদের মাঝে। শেষটায় যেন বেঁচে থাকার আকুতিই বড় হয়ে ওঠে দ্বীনের মননে: Let me live, God, let me live! চারিত্রিক বিশ্লেষণে মাদক বিক্রেতা ফালানী চরিত্রটাও বেশ মিশ্র অনুভূতি সৃষ্টি করে। কখনো মায়ের চরিত্রে, কখনো বা স্নেহকাতর বড় বোনের মতো আগলে রাখতে চেয়েছে দ্বীনকে। উপন্যাসের প্রায় সবগুলোই চরিত্রেরই বিকাশ বেশ দুর্বার ভাবে শুরু হয়েও কেন যেন হঠাৎ করেই থমকে গিয়েছে বলে মনে হয়েছে। হয়তো লেখিকার ইচ্ছেই তেমন ছিল। তবে স্বীকার করছি চরিত্রের মনস্তত্ত্বে তার প্রবল এবং নির্ভার বিচরণ প্রশংসার দাবী রাখে। লেখালেখিতে এলেন কী করে? : আমি বড় হয়েছি কানাডায়। আমার বড় হওয়ার সময়টাতে চলছে টেলিফোনের রাজত্ব। কিন্তু আমার ভালো লাগত চিঠি। দেশে কাউকে ফোন করতাম না, চিঠি লিখতাম। মূলত, সেই ছিল আমার লেখালেখির শুরু। উপন্যাস লেখা শুরু করলেন কিভাবে? : বছর চার আগে শুরু করেছিলাম। প্লট সাজাতে অনেক সময় নিয়েছি। তখন চাকরি করতাম না। হাতে প্রচুর সময় ছিল। খুব কাছ থেকে ঘটনাগুলো দেখে সময় নিয়ে লিখেছি। লেখার আগে মাদকাসক্ত ছেলেমেয়েদের নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করতে হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারত দু জায়গাতেই করেছি। লেখা শেষ করতে প্রায় চার মাস লেগেছে। তারও প্রায় তিন বছর পর উপন্যাসটি বাজারে এসেছে। মাঝে এত সময় নিলেন কেন? : কাছের পাঠকের অনুভূতি, প্রতিক্রিয়া বোঝার চেষ্টা করেছি। অনেকের পরামর্শ আমাকে উপন্যাসটা ঢেলে সাজাতে সাহায্য করেছে। সাহিত্য গোষ্ঠী ‘রাইটার্স ব্লক’ও অনেক সাহায্য করেছে। আমি এত দূর আসতে পারতাম না, যদি বন্ধুরা দিনের পর দিন পাশে থেকে উৎসাহ না যোগাত। আমরা একে অপরের সমালোচনা করি, গঠনমূলক আলোচনায় বড় সিদ্ধান্তও নিই। আমরা ইন্টারনেটে রাইটার্স ব্লকের যে ওয়েবসাইট করেছি, তাতে অত্যন্ত কম সময়ে প্রচুর প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। অনেকে এখনো আপনার উপন্যাসটি পড়েনি, তাদের এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে বলবেন কি? : একটি বিশেষ সময়ের পটভূমিতে আধুনিক কিছু ছেলেমেয়ের চারপাশের পরিবেশ, জীবনযাপনের রীতি তুলে ধরার চেষ্টা করা