কানসৈকতে বাংলাদেশের দিন
কানের লালগালিচায় ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবির কলাকুশলীরা
জনি হক, কান (ফ্রান্স) থেকে০৪:২৬, ১১ জুলাই, ২০২১ | পাঠের সময় : ২.৯ মিনিট
কানের আবহাওয়া এখন অনেকটা ঢাকার মতোই! রোদে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ মুশকিল। গা যেন জ্বলে যায়! পালে দে ফেস্টিভাল ভবনের চতুর্থ তলায় সংবাদকর্মীদের জন্য বরাদ্দ ছাদবারান্দায় প্রখর রোদ আরও গায়ে লাগে। ঢাকা থেকে আসা সংবাদকর্মী পার্থ সনজয়ও একমত প্রকাশ করলেন। তবে জার্মানি থেকে আসা সংবাদকর্মী যুবায়ের আহমেদ ও অনুপম কানুনগো ইউরোপে থাকায় খুব একটা পার্থক্য দেখছেন না কানে।
ঢাকার আরও বেশ কয়েকজন বাসিন্দা এখন দক্ষিণ ফরাসি উপকূলীয় শহরটিতে অবস্থান করছেন। সবারই একইরকম অনুভূতি হওয়ার কথা। তবে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবির সঙ্গে সম্পৃক্তদের ক্ষেত্রে হয়তো ব্যাপারটা আলাদা! কারণ একের পর এক স্বপ্ন সত্যি হওয়ার সিঁড়িতে পা রাখছেন তারা। সেই সিঁড়ি বেয়ে ক্রমেই ওপরে উঠছেন ছবিটির পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ ও অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন।
কান উৎসবের অফিসিয়াল সিলেকশনের ইতিহাসে বাংলাদেশের প্রথম ছবি ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে দর্শকরা দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানিয়েছেন। ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এখন ছবিটির বন্দনা চলছে। এরপর কানের ফটোকলে বিশ্বের শত আলোকচিত্রীর সামনে এসেছেন পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেত্রী ও নির্বাহী প্রযোজক। সেইসব স্থিরচিত্র ছড়িয়ে পড়েছে তামাম দুনিয়ায়। এবার লালগালিচায় সম্মান পেলেন ছবিটির কলাকুশলীরা।
কান উৎসবের ৭৪তম আসরে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে থাকা ‘দ্য ডিভাইড’ ছবির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার উপলক্ষে লালগালিচায় হেঁটেছেন ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সংশ্লিষ্ট আটজন। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ১টা ৪০ মিনিট) পালে দে ফেস্টিভাল ভবনের সামনের চত্বরে ঝা-চকচকে লালগালিচায় হেঁটে সাদ-বাঁধনসহ গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে ঢুকেছেন চিত্রগ্রাহক তুহিন তামিজুল, প্রোডাকশন ডিজাইনার আলী আফজাল উজ্জল, শব্দ প্রকৌশলী শৈব তালুকদার ও কালারিস্ট চিন্ময় রয়।
কানের ৭৪তম আসরের অফিসিয়াল সিলেকশনে কেবল আঁ সার্তে রিগা বিভাগেই আছে বাংলাদেশ। যদিও এবারের আয়োজনে আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাম জড়িয়ে রয়েছে। কানের বাণিজ্যিক শাখা মার্শে দ্যু ফিল্মের অন্যতম একটি প্রোগ্রামের নাম ‘কান ডকস’। এতে ‘ডকস-ইন-প্রোগ্রেস’ বিভাগে নির্বাচিত হয়েছে বেশকিছু প্রামাণ্যচিত্র প্রকল্প। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশন্যাল ফিল্ম ইনিশিয়েটিভ অব বাংলাদেশের সহযোগিতায় শোকেস সাউথ এশিয়ায় নির্বাচিত চারটি প্রামাণ্যচিত্র প্রকল্পের অংশবিশেষ গতকাল পালে দে ফেস্টিভাল ভবনের রিভিয়েরা টু’তে দেখানো হয়।
ইন্টারন্যাশন্যাল ফিল্ম ইনিশিয়েটিভ অব বাংলাদেশের সভাপতি সামিয়া জামান এখন কানে। তাকে সহযোগিতা করতে সঙ্গে এসেছে মেজ মেয়ে প্রিয়া। ‘ডকস-ইন-প্রোগ্রেস’ বিভাগে নির্বাচিত প্রকল্প চারটির মধ্যে ‘থার্টিন ডেস্টিনেশনস অব অ্যা ট্রাভেলার’-এর সহ-প্রযোজক বাংলাদেশের মোখলেসুর রহমান তালুকদার লেনিন কানে এসেছেন। আগামী ১৩ জুলাই ডক ডে’তে ‘ডকস-ইন-প্রোগ্রেস’ থেকে ছয়টি পুরস্কার দেওয়া হবে।
সামিয়া জামানের আমন্ত্রণে রিভিয়েরা টু’তে এসেছিলেন বাংলাদেশের দুই তরুণ চলচ্চিত্রকর্মী আরিফুর রহমান ও বিজন ইমতিয়াজ। তারা ‘মুভিং বাংলাদেশ’ ছবি নির্মাণে আর্থিক সহায়তা পেতে বিশ্বের বৃহত্তম এই ছবিবাজারে এসেছেন। বিভিন্ন দেশের প্রযোজক, পরিচালক, পরিবেশক ও কলাকুশলীসহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা জমায়েত হয়েছেন এই ছবিবাজারে। তারা বিভিন্ন প্রকল্পের প্রযোজনা, পরিবেশনা ও নির্মাণ বিষয়ে মতবিনিময় করছেন এবং ছবির নির্মাণ ও বিপণনে প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন।
‘মুভিং বাংলাদেশ’ হবে নুহাশ হুমায়ূন পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র। এবারের মার্শে দ্যু ফিল্মে ভারতের এনএফডিসি ফিল্ম বাজার থেকে আমন্ত্রিত হয়েছে এই প্রকল্প। গত বছর গোয়া ফিল্ম বাজারে নির্বাচিত হয় এটি।
‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবির কলাকুশলীদের আগে শুক্রবার বিকেলে লালগালিচায় হেঁটেছেন আরিফুর রহমান। ফ্রেঞ্চ ইনস্টিটিউটের লা ফেব্রিক সিনেমার পক্ষ থেকে এই সুযোগ পেয়েছেন তিনি। লা ফেব্রিক সিনেমায় নির্বাচিত বিভিন্ন দেশের সম্ভাবনাময় মোট ১০টি ছবির চিত্রনাট্যের মধ্যে রয়েছে আরিফুর রহমান প্রযোজিত ‘একা’। এর ইংরেজি নাম ‘সলো’। বাংলাদেশ, ভারত ও ফ্রান্সের যৌথ প্রযোজনায় তৈরি হবে এটি।
কানের বাণিজ্যিক শাখা মার্শে দ্যু ফিল্মে অংশ নিতে আসা বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র পরিবেশক ও এজেন্টদের সঙ্গে উদীয়মান তরুণ নির্মাতাদের যোগাযোগ করিয়ে দিতে ফ্রান্স সরকারের ফ্রেঞ্চ ইনস্টিটিউট সাগরপাড়ে বসিয়েছে ‘ত্যু লে সিনেমাস দ্যু মন্দ’ (অল দ্য সিনেমাস অব দ্য ওয়ার্ল্ড) প্যাভিলিয়ন। এখানেই চলছে ‘লা ফেব্রিক সিনেমা’র (দ্য সিনেমা ফ্যাক্টরি) আয়োজন।
ইত্তেফাক/জেএইচ/এমএএম